পাতা:বাঙ্গালার ইতিহাস প্রথম ভাগ (রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়).djvu/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ।
২৯

প্রদেশগুলি আর্য্যগণের করায়ত্ত হইয়াছিল; এই ঘটনার তিন বা চারি শতাব্দী পরে, সমগ্র আর্য্যাবর্ত্ত, মগধের শূদ্রজাতীয় রাজগণের অধীনতা স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছিল। ভাষাতত্ত্ববিদ্ ও প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌গণ একবাক্যে স্বীকার করিয়া থাকেন যে, প্রাচীন ভারতের শূদ্রগণ অনার্য্যবংশসম্ভূত। উত্তরাপথে শূদ্রবংশজাত রাজবংশের প্রাধান্য স্থাপনের প্রকৃত অর্থ,—আর্য্যজাতীয় বিজেতৃগণের নির্বীর্য্যতা ও ক্ষত্রিয়বংশজাত আর্য্যরাজগণের অধঃপতন। আর্য্যরাজগণের অধঃপতনের পূর্ব্বে উত্তরাপথের পূর্ব্বাঞ্চলে আর্য্যধর্ম্মের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন উপস্থিত হইয়াছিল, জৈনধর্ম্ম ও বৌদ্ধধর্ম্ম এই আন্দোলনের ফল। জৈনধর্ম্মগ্রন্থমালা পাঠ করিলে স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায় যে, আর্য্যাবর্ত্তের পূর্ব্বাংশই এই নূতন ধর্ম্মমতের জন্মস্থান। জৈনধর্ম্মের চতুর্ব্বিংশতি তীর্থঙ্করের মধ্যে চতুর্দ্দশজন, মগধে ও বঙ্গে নির্ব্বাণ লাভ করিয়াছিলেন[১]। মগধদেশে উরুবিল্ব গ্রামের নিকটে শাক্যরাজপুত্র গৌতম সিদ্ধার্থ বৌদ্ধধর্ম্মের সৃষ্টি করিয়াছিলেন। জৈন ও বৌদ্ধধর্ম্মের ইতিহাস পর্য্যালোচনা করিলে স্পষ্ট বোধ হয় যে, দীর্ঘকালব্যাপী বিবাদের পরে সনাতন আর্য্যধর্ম্মের বিরুদ্ধবাদী নূতন ধর্ম্মদ্বয় ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠালাভ করিতে সমর্থ হইয়াছিল। চতুর্ব্বিংশতিতম তীর্থঙ্কর বর্দ্ধমান মহাবীরদেবের আবির্ভাবের পূর্ব্বে, মগধ ও বঙ্গ বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডরাজ্যে বিভক্ত ছিল। গৌতমবুদ্ধ ও মহাবীর

  1. চতুর্ব্বিংশতি জৈন তীর্থঙ্করের মধ্যে দুইজন মিথিলায় ও দুইজন মগধে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। ঊনবিংশতিতম তীর্থঙ্কর মল্লিনাথ ও একবিংশতিতম তীর্থঙ্কর নিমিনাথ মিথিলায়, বিংশতিতম তীর্থঙ্কর মুনি সুব্রতনাথ রাজগৃহে, ও চতুর্ব্বিংশতিতম তীর্থঙ্কর মহাবীর বর্দ্ধমান বৈশালী নগরে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। চতুর্ব্বিংশতি জনের মধ্যে দ্বাদশ জন (অজিতনাথ, সস্তব, অভিনন্দন, সুমতিনাথ, পদ্মপ্রভ, সুপার্শ্ব, পুষ্পদন্ত, শীতলনাথ, অংশুনাথ, বিমলনাথ, নিমিনাথ, ও পার্শ্বনাথ) সমেত শিখরে, অর্থাৎ পার্শ্বনাথ পর্ব্বতে নির্ব্বাণলাভ করিয়াছিলেন। দ্বিতীয় তীর্থঙ্কর বাসুপূজ্য চম্পানগরে ও চতুর্ব্বিংশতিতম তীর্থঙ্কর বর্দ্ধমান মহাবীর অপাপপুরীতে নির্ব্বাণলাভ করিয়াছিলেন। এই নগরদ্বয় অঙ্গ ও মগধদেশে অবস্থিত।