বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বারীন্দ্রের আত্মকাহিনী - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ե-8 বারীদ্রের আত্মকাহিনী এজাহারে মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, রংপুর আদি অনেক স্থানে বহু লোক এমনকি স্থানে স্থানে রাজা জমিদার অবধি ধরা পড়িতেছে। নরেন মরিলে এতগুলি মোকদ্দমা বেমালুম ফাসিয়া যায়। ম্যাজিষ্ট্রেটের কোর্ট হইতে মোকদ্দমা সেসন্সে সোপর্দ হইবার পূর্বেই এ কাজ কিন্তু করা দরকার । তদন্তে সে যাহা বলিতেছে তাহা সেসন্সে বলিতে পাইলে এবং তাহার সাক্ষ্য আর কেহ প্ৰমাণ করিলে (coroborate) মোকদ্দমাগুলি কায়েম হইয়া দাড়াইবে । আমি মনে মনে ঠিক দিয়া রাখিয়াছিলাম যে, বাহির হইতেই কেহ না কেহ এ কাৰ্য্য নিশ্চয়ই করিবে, আমাদের মাথা ঘামাইবার আবশ্যক নাই । আমি মাথা গুজিয়া আপন মনে আপনি তালেই চলিতেছিলাম, কে কি পরামর্শ আঁটিতেছে কিম্বা কি করিতেছে সে দিকে বড় একটা নজর দিই নাই । কঁাচ লিডারের যাহা সচরাচর হইয়া থাকে, আমার ধাতটা তদনুরূপই ছিল, বিলক্ষণ কিছু স্বেচ্ছাচারী ও autocratic গোছের ; সবাইকে লইয়া কাজ করিতাম বটে, কিন্তু আপন গোয়েই করিতাম। জেলে আসিয়া ছেলেদের কাহারও কাহারও মধ্যে আমার প্রতি একটা বেশ রাগ ও অভিমানের ভাব যে দেখা দিয়াছে তাহা বুঝিয়াছিলাম, বিশেষ কিছু কাজ না করিয়াই ধরা পড়িয়া গেলাম, এই আক্ষেপই এই অভিমানের কারণ । জেলের প্রথম কতক দিন নিজের আশার শ্মশান লইয়াই গুম হইয়া পড়িয়াছিলাম, তাহার পর দেবব্রতের স্পর্শে আমার এতদিনের মুলতুবি রাখা সাধনাও অল্পে অল্পে জীবন পাইতেছিল । তাই ছেলেদের এ রাগ আমি দেখিয়াও দেখি নাই, এটা ভাবিয়া উঠিতেও পারি নাই যে, আমাকে বাদ দিয়া অন্ততঃ আমাকে না জানাইয়া, তাহারা একটা কিছু করিবে । আমার মনোভাব জানিয়া তাহারাও তাহদের কৃতসংকল্পতার কথা আমাকে বিন্দু-বিসর্গও বলে নাই, শুধু একবার, কথায় কথায় মতটা জানিয়া লইয়াছিল ।