পাতা:বিক্রমপুর - তৃতীয় বর্ষ.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিক্রমপুর।
৩য় বর্ষ, ১ম সংখ্যা

সংস্কারের প্রয়োজন। রাস্তা ঘাট সংস্কার করিতে যাইয়া বহু স্থলেই ফৌজদারী মোকদ্দমার সৃষ্টি হয়। জঙ্গল কাটা সেও এক ভীষণ ব্যাপার। সারাবাড়ী জঙ্গলে অন্ধকার হইয়া থাকুক, বৌদ্র ও বাতাস খেলিবার কোনরূপ ব্যবস্থা না থাকুক, তবু গাছের মায়ায় কেহ গাছ কাটেন না। এজন্য অনেক সময় সংস্কারেছু ব্যক্তিবর্গ পল্লীগ্রামের সংস্কার-কার্যে অগ্রসর হইতে চাহেন না।

 তারপর পুষ্করিণীর কথা। প্রতি গ্রামেই দুই তিনটি করিয়া ভাল পুষ্করিণী থাকে,—থাকিলে কি হইবে, সে সকলের জল নির্ম্মল রাখিবার জন্য কেহ বড় একটা মনোেযোগ করেন না। সে দিকে একটু বিশেষরূপ লক্ষ্য করিলে কলেরা, রক্তামাশয় প্রতি বহু দুরংরোগ্য রোগের হস্ত হইতে মুক্তি পাওয়া যায়।

 উপদেশ দেওয়া সহজ —কিন্তু কার্য্য করা বড়ই কঠিন। অর্থাভাবই ইহার প্রধান কারণ। গ্রামের লোকের অবস্থা দিন দিনই—শোচনীয় হইয়া উঠিতেছে, তাহারা কি পরিবার প্রতিপালন করিবে, না পুষ্করিণী-সংস্কারের ব্যবস্থা করিবে? আর্থিক অবস্থার উন্নতি হইলে, বাসগৃহ, পানীয়জল, পরিচ্ছদ ইত্যাদির সুব্যবস্থা হয়। কিন্তু আবার দেখা যাইতেছে যে অর্থ থাকিলে ও অনেকে দেশের কথা ভাবেন না, উহার হিতার্গে কোনরূপ চেষ্টা যত্ন করেন না। অনেক সময় দেখা যায়—গ্রামের সাধারণ অবস্থাপন্ন লোকের বাড়ীর দীঘি বা পুষ্করিণীর জল যতটা পরিষ্কার, ধনীর বাড়ীর তোপ নহে। ধনী মহোদয়ের পূৰ্বপুরুষের খনিত সরোবরটার সংস্কার হয় না, কেন হয় না? কারণ তিনি দেশে আসেন না, দেশে আসিবার আবশ্যকতা নাই কাজেই বাড়ীর পুষ্করিণাটীর সংস্কারেরও প্রয়োজনীয়তা মনে করেননা। দেশে যান না, কাজেই দেশের লোকের প্রতি যে তাহাদের একটা কর্ত্তব্য আছে সে কথাও ভুলিয়া যান। বিলাসিতায় কিংবা অন্যান্য তুচ্ছ বিষয়ে তাঁহাদের যে অর্থব্যয় হয়, তাহার দশভাগের একভাগ অর্থব্যয় করিলেও তাঁহারা দেশের প্রভূত কল্যাণ সাধন করিতে পারেন। সৎকার্য্য দ্বারা মানুষের হৃদয় যত সহজে জয় করা যায়, কঠোর শাসনে বা শক্তি-প্রয়োগে তাহা হয় না। দরিদ্র-নারায়ণের সেবায় যে কত আনন্দ, তাহা যিনি উহা না করিয়াছেন তিনি উপলব্ধি করিতে পারেন না। বিক্রমপুরের বড় বড় গ্রামে ধনী ও উচ্চপদস্থ রাজকর্ম্মচারীর সংখ্যা নেহাৎ