পাতা:বিক্রমপুর - তৃতীয় বর্ষ.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৈশাখ ১৩২২]
বিক্রমপুর-প্রসঙ্গ

ন্যূন নহে, তাহাদের মধ্যে সকলেই দেশে আসেন না, এমন নহে, যখন দেশে আসেন সে সময়ে গ্রামের কথা বড় কেহ ভাবেন না। নিজ নিজ স্বার্থ কিংবা পুত্র কন্যার বিবাহের সম্বন্ধ ঠিক করিয়াই বাড়ী হইতে চলিয়া যান। যে অল্প সময় থাকেন তখন ‘দেশে শরীর টেঁকেনা, লোকজন নাই’ দলাদলি মারামারি বড় ঝঞ্চ্ঝাট এ সকল নানা কথা লইয়াই ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু কেহই গ্রাম্য পথ, ঘাট, পুষ্করিণী ইত্যাদির কিরূপে সংস্কার করা যাইতে পারে? ডিষ্ট্ৰীক্টবোড়, লোক্যালবোর্ড হইতে গ্রামের জন্য কি সাহায্য পাওয়া গিয়াছে? গ্রাম্য রাস্তাগুলি কেন সংস্কার হইতে পারে না, কোন্ রাস্তার সংস্কার সম্বন্ধে কাহার কোন্ আপত্তি, অপত্তির হেতু মীমাংসার কি কি ব্যবস্থা হইতে পারে সে সকল দিকে গ্রামের লোকেরা যদি আগ্রহান্বিত না হ’ন তাহা হইলে কিরূপে গ্রাম্য স্বাস্থ্যও পথ ঘাটের উন্নতি হইবে?

 পুষ্করিণী পানায় ঢাকিয়া ফেলিয়াছে, জলে দুর্গন্ধ হইয়াছে, চারিপাড়ে ঝোপ ঝাড়ে অন্ধকার করিয়া আছে, অথচ পুকুরের চারিপাড়ে যাহাদের বাড়ী তাহারা সকলেই সঙ্গতিশালী লোক, পাছে নিজ নিজ স্বার্থ নষ্ট হয়, সে জন্য নিজেরা কেহই পুষ্করিণী পরিষ্কারের জন্য মনোযোগী নহেন। কিন্তু যখন মহকুমার ম্যাজিষ্ট্রেট বাহাদুর উহার পরিষ্কারের জন্য সরিকগণের প্রতি আদেশ দিলেন অমনি নির্ব্বিবাদে সকল অংশীদারগণ মিলিত হইয়া অর্থব্যয় করিলেন, পুষ্করিণীটি পরিষ্কার হইল! এইরূপ লজ্জা, এইরূপ ধিকার পাইয়াও আমাদের মনুষ্যত্ব জাগিয়া উঠে না! মানুষ হইবার আকাঙ্ক্ষা দিন দিনই যেন আমাদের হ্রাস পাইতেছে! এই আকাঙ্ক্ষা জাগরিত হওয়া যেমন আবশ্যক, সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃত কার্য্য করাও তেমন প্রয়োজন।

 যাহারা ধনী তাহাদের যেমন অর্থ দ্বারা দেশের কার্য্য করিবেন, তদ্রূপ মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র যাহারা তাহারাও নিজ নিজ শক্তি সামর্থ্য ও প্রীতিদ্বারা সমাজকে সুগঠিত করিবার চেষ্টা করিলে অতি সহজেই গ্রামের অনেক কল্যাণ সাধন করিতে পারেন। ভারতবর্ষ দরিদ্র বটে, কিন্তু মহত্ত্বে ও হৃদয়ে ভারতবাসী দরিদ্র নহে। যাহার অন্ন জোটে না এমন দরিদ কৃষকের বাড়ীতেও যদি একজন অতিথি উপস্থিত হয়, সে কখনও নিরাশ হইয়া ফিরে না। বালক বালিকাদের দৈনন্দিন শিক্ষাই অতিথি সেবা ও পরোপকারিতা। পূর্ব্ববঙ্গত এ বিষয়ে