পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৬৬
বিচিত্র প্রবন্ধ

জীবনটাকে চারটে দেয়ালের মধ্যে সঙ্কীর্ণ করে এনেছিলুম, তার পদার্থভার যতদূর সম্ভব কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল তখন সেই হাল্‌কা জিনিষটাকে হাতে তুলে নিয়ে বেশ চেখে চেখে ভোগ করবার সুযোগ হয়েছিল। ভোগের সামগ্রীটি আর কিছুই না, কেবলমাত্র একখানি মন, আর একখানি প্রাণ। সে মন সে প্রাণ আপনার শেষপ্রান্তে-আপনার অতীত দেশের গায়ে-ঠেকা। লণ্ডনের ডাক্তার পাড়ায় সে বাড়িটা। ছোটোঘর, বিছানা ছাড়া আর কোনো আসবাব নেই। দেয়ালের উপরিভাগে একটি বাতায়ন, তার থেকে কিছুই দেখা যেত। কেবল কোনো একসময়ে আস্‌ত একটুখানি রোদ্দুর, আর বাকী সময়ে আস্‌ত কেবল পরিমিত আলো। আকাশভরা রোদ্দরকে এমন করে কখনো দেখিনি—এটিকে পেতুম যেন একটুক্‌রো পরশমণির মতো, আমার মনের সমস্ত ভিতরটাকে সোনার আভায় পরিপূর্ণ ক’রে দিত। এমনি টুক্‌রো করে পাওয়াতেই আমি যেন আকাশের সমস্ত আলোককে সত্য ক’রে পেয়েছি—উদাসীন অঞ্জলি উপছিয়ে আঙুলের ফাঁকের ভিতর দিয়ে একটুও গ’লে প’ড়ে যায়নি। দীর্ঘকাল নিস্তব্ধ হয়ে থাকার দরুণ মনের ধারণাশক্তি বোধ হয় বাড়ে। তাকে ঠিক ধারণাশক্তি নাম দেওয়া যায় না—আত্মানুভূতি বলা যেতে পারে। অহরহ নানা বিষয়ে চিত্ত যখন বিক্ষিপ্ত হয়ে বেড়ায় তখন সে আপনার কাছে আসবার অবকাশ পায় না—কিছুকাল দায়ে প’ড়ে যখন চলাচল বন্ধ ক’রে স্থির হয়ে থাকা যায় তখন ক্রমে সমস্ত আবিলতা থিতিয়ে গিয়ে চিত্ত আপনাকে আপনি স্বচ্ছ করে জানতে পায়—সেই জানাতে নিবিড় একটি আনন্দ আছে। সেই আনন্দটি কেন ও কী, স্পষ্ট ক’রে বলা শক্ত। ইংরেজি ভাষায় যাকে Mystic বলে যদি সেই জাতীয় একটা ব্যাখ্যা চিঠির মধ্যে দিলে নিতান্ত অসঙ্গত না হয় তাহোলে বল। যেতে পারে যে, বিশ্বজগতের গভীরতার মধ্যে একটি নিস্তব্ধ বিশুদ্ধ