পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
অসম্ভব কথা
৪১

মিলাইয়া গেল। পরপীড়ন পাপের যদি যথোপযুক্ত শাস্তি থাকে তবে নিশ্চয় পরজন্মে আমি মাষ্টার হইয়া এবং আমার মাষ্টার মহাশয় ছাত্র হইয়া জন্মিবেন। তাহার বিরুদ্ধে একটি আপত্তি এই যে, আমাকে মাষ্টার মহাশয়ের মাষ্টার হইতে গেলে অতিশয় অকালে ইহসংসার হইতে বিদায় লইতে হয়—অতএব আমি তাঁহাকে অন্তরের সহিত মার্জ্জনা করিলাম।

 ছাতাটি দেখিবামাত্র ছুটিয়া অন্তঃপুরে প্রবেশ করিলাম। মা তখন দিদিমার সহিত মুখোমুখী বসিয়া প্রদীপালোকে বিন্তি খেলিতেছিলেন। ঝুপ করিয়া একপাশে শুইয়া পড়িলাম। মা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী হইয়াছে?” আমি মুখ হাঁড়ির মতো করিয়া কহিলাম, “আমার অসুখ করিয়াছে, আজ আর আমি মাষ্টারের কাছে পড়িতে যাইব না।”

 আশা করি, অপ্রাপ্তবয়স্ক কেহ আমার এ লেখা পড়িবে না, এবং স্কুলের কোনো সিলেক্‌শন বহিতে আমার এ লেখা উদ্ভূত হইবে না। কারণ, আমি যে কাজ করিয়াছিলাম তাহা নীতিবিরুদ্ধ এবং সেজন্য কোনো শাস্তিও পাই নাই। বরঞ্চ আমার অভিপ্রায় সিদ্ধ হইল।

 মা চাকরকে বলিয়া দিলেন—“আজ তবে থাক, মাষ্টারকে যেতে ব’লে দে।”

 কিন্তু তিনি যেরূপ নিরুদ্বিগ্নচিত্তে বিন্তি খেলিতে লাগিলেন, তাহাতে, বেশ বুঝা গেল যে, মা তাঁহার পুত্রের অসুখের উৎকট লক্ষণগুলি মিলাইয়া দেখিয়া মনে মনে হাসিলেন; আমিও মনের সুখে বালিশের মধ্যে মুখ গুঁজিয়া খুব হাসিলাম—আমাদের উভয়ের মন উভয়ের কাছে অগোচর রহিল না।

 কিন্তু সকলেই জানেন, এ প্রকারের অসুখ অধিকক্ষণ স্থায়ী করিয়া রাখা রোগীর পক্ষে বড়োই দুষ্কর। মিনিটখানেক না যাইতে যাইতে দিদিমাকে ধরিয়া পড়িলাম—দিদিমা একটা গল্প বলো। দুই চারিবার