পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ

 সরকার শিক্ষা-পরিষদের প্রস্তাব মঞ্জুর করিলেন। বিদ্যাসাগর মাসিক দেড় শত টাকা বেতনে সংস্কৃত কলেজের প্রিন্সিপাল হইলেন (২২এ জানুয়ারি, ১৮৫১)। এক কথায়, কলেজের সংস্কার, পুনর্গঠন ও পরিবর্তনের পূর্ণ অধিকার তাঁহার হাতে দেওয়া হইল।

 ১৮৫১ হইতে ১৮৫৩ খৃষ্টাব্দের সংস্কৃত কলেজের ইতিহাস প্রকৃতপক্ষে ইহার পুনর্গঠনের ইতিহাস। বিদ্যালয়ের শাসনশৃঙ্খলার দিকে বিদ্যাসাগর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখিলেন। নিয়মিত উপস্থিতির দিকে নজর রাখা হইল; সামান্য কারণে শ্রেণীত্যাগ এবং অকারণ গণ্ডগোল ও বিশৃঙ্খলা প্রভৃতি নিবারণ করার দিকেও যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হইল। প্রতি অষ্টমী ও প্রতিপদে কলেজের ছুটি বন্ধ করিয়া সপ্তাহান্তে রবিবারে ছুটির দিন ধার্য হইল। পূর্বে কেবল ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য ছাত্রই সংস্কৃত কলেজে পড়িবার অধিকারী ছিল। কিন্তু বিদ্যাসাগর ছিলেন—দেশে শিক্ষাবিস্তার ও লোকের জ্ঞানবৃদ্ধির পরম বন্ধু। তিনি ১৮৫১, জুলাই মাসে প্রথমে কায়স্থ, পরে ১৮৫৪, ডিসেম্বর মাসে যে-কোনো সম্ভ্রান্ত ঘরের হিন্দুকে সংস্কৃত কলেজে পড়িবার অবাধ অনুমতি দিলেন।

 বিদ্যাসাগর নিজের কলেজের জন্য আর একটি কাজ করিলেন। সংস্কৃত কলেজের সম্মান ও ছাত্রদের ভবিষ্যতের উপরও যে তাঁহার প্রখর দৃষ্টি ছিল, ইহাতে তাহারই পরিচয় পাওয়া যায়। হিন্দুকলেজ ও মাদ্রাসার পাশ-করা কৃতবিদ্য ছাত্রদের ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটের পদ দেওয়া হইত। বিদ্যাসাগর শিক্ষা-পরিষদের মধ্য দিয়া গভর্ন্মেণ্টের কাছে সংস্কৃত কলেজের সুযোগ্য ছাত্রদিগকে এই বিষয়ে সমান সুযোগ ও সুবিধা দিবার সনির্ব্বন্ধ প্রার্থনা জানাইলেন (১৩ই জানুয়ারি, ১৮৫২)। প্রার্থনা গ্রাহ্য হইয়াছিল। সংস্কৃত কলেজের ছাত্রদিগকে পরে ডেপুটিগিরি দেওয়া হইত।[১]

  1. Education Con. 15 April 1852, No.3, see also Nos.2 & 4.