পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হ্যালিডে সাহেব বিদ্যাসাগরকে ডাকিয়া তাঁহার পদত্যাগপত্র ফিরাইয়া লইতে বলিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় বলিলেন—যে-কার্য্য তিনি মন দিয়া করিতে পারিবেন না, শুধু টাকার জন্য সে-কার্য্য করিতে তিনি রাজী নন। হ্যালিডে সাহেব বলিলেন—আমি জানি তুমি সব দানধ্যান কর, কিছুই রাখ না। সাত শত টাকা মাহিনার চাকুরি ছাড়িয়া খাইবে কি? বিদ্যাসাগর মহাশয় বলিলেন—ডাল-ভাত। সাহেব বলিলেন— তাই বা পাইবে কোথা থেকে? তিনি বলিলেন—এখন দুবেলা খাই, তখন না-হয় একবেলা খাব; তাও না জোটে, একদিন অন্তর খাব। তাই বলিয়া যে-কাজে মন বসিতেছে না, সে কাজ করিয়া টাকা লইতে আমি চাই না।[১]

 বিদ্যাসাগর মহাশয় পদত্যাগ করিলেন বটে, কিন্তু গবর্ন্মেণ্ট যখন যে-বিষয়ে তাঁহার পরামর্শ চাহিতেন, তিনি বেশ ভাবিয়া-চিন্তিয়া পরামর্শ দিতেন। সেজন্য গবর্ন্মেণ্টে তাঁহার খুব খাতির ছিল। ১৮৮০ সালে গবর্ন্মেণ্ট তাঁহাকে সি. আই. ই করেন।

 বিদ্যাসাগর মহাশয় খুব পরিশ্রম করিতে পারিতেন, তাঁহার অনেক গুলি বই ছিল। তিনি সব বইয়ের প্রুফ নিজে দেখিতেন এবং সর্ব্বদাই উহার বাংলা পরিবর্ত্তন করিতেন। দেখিতাম প্রত্যেক পরিবর্ত্তনেই মানে খুলিয়াছে। তিনি প্রেসের কাজ বেশ জানিতেন— বুঝিতেন। বহুদিন ধরিয়া তিনি সংস্কৃত প্রেসের মালিক ছিলেন। সংস্কৃত প্রেসই বাংলার ভাল প্রেস ছিল। তিনি সংসারের কাজ খুব বুঝিতেন; প্রেস হইল, বই ছাপা হইল, বিক্রয় করিবে কে? তাহার জন্য সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটারি (১৮৪৭) নাম দিয়া এক বইয়ের দোকান খুলিলেন। উহা একরকম বইয়ের আড়ত। বই লিখিয়া ছাপাইয়া


  1. কথাগুলি আমি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিজমুখে শুনিয়াছি।