পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৫ o বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী—শিক্ষা অৰ্দ্ধদগ্ধ মৃতদেহ ফেলিয়া গৃহে পলায়ন করিয়াছিল। শৃগাল শ্মশানক্ষেত্রে সেই অৰ্দ্ধদগ্ধ মৃত মনুষ্যদেহ দেখিয়া, মহানন্দে ভলুককে বলিল, এস বন্ধু । আমরা উভয়ে এই হৃষ্টপুষ্ট নরদেহ ভক্ষণ করি। আজ কাহার মুখ দেখিয়া উঠিয়াছিলাম, তাই আজ ভোজনের এমন সুন্দর আয়োজন দেখিতেছি। এই বলিয়া শৃগাল হৃষ্টচিত্তে সেই মৃতদেহ ভক্ষণ করিতে ধাবমান হইল । লোভবশতঃ শৃগালের জিহবায় লাল নিঃসরণ হইতেছে দেখিয়া ভল্লুক হাসিয়া বলিল, দেখ বন্ধু ! আমি কত মহৎ । তুমি মৃত মনুষ্যের দেহ টানিয়া ছিড়িয়া ভক্ষণ করিতে ধাবমান হইয়াছ, অথচ আমি কখনও মরা মানুষ স্পর্শ করি না । ধূৰ্ত্ত শৃগাল কিছুমাত্র লজ্জিত না হইয়া উত্তর দিল, ভাই হে ! তোমার কথা সত্য, ইহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু তুমি যদি জীবিত মনুষকে দেখিতে পাইলেই হত্যা না করিতে, তাহা হইলে আমি তোমার সাধুতার প্রশংসা করিতাম । মাহুযের মৃত্যুর পর মানুষের দেহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অপেক্ষ মানুষের দেহে প্রাণ থাকিতে প্রাণ রক্ষণ করা অধিকতর প্রশংসনীয়। শৃগাল ও কণ্টকবৃক্ষ এক শৃগাল, বহুশুকরের নিকট তাড়া খাইয়া, এক বেড়া ডিঙ্গাইয়া, পলাইতে চেষ্টা করিয়াছিল। কিন্তু বেড়া ডিঙ্গাইতে গিয়া, সে যখন পড়িয়া যাইবার উপক্রম করিল, তখন সে বেড়ায় সংলগ্ন এক কাটাগাছের ডাল ধরিয়াছিল। উহাতে তাহার হাতে কঁাট। ফুটিয়া গেল, হস্তে রক্তপাতও হইল, সে যন্ত্রণায় চীৎকার করিয়া উঠিল। কেবল যে কাটা ফুটিল তাহা নহে, কাটাগাছের হাল্কা ডাল ভাঙ্গিয়া যাওয়াতে সে ভূতলে পড়িয়া গেল। তখন শৃগাল যন্ত্রণায় ও ব্যথায় অধীর হইয়া, মহা ক্রুদ্ধ হইয়া কণ্টকবৃক্ষকে ভৎসন করিয়া বলিল, রে দুৰ্ব্বত্ত ! তোকে অবলম্বন করিতে গিয়াই আজ আমার এ দশ ঘটিল। তোর মরণই মঙ্গল । কণ্টকবৃক্ষ এই কথা শুনিয়া বলিল, ভাই হে ! এ বড় মজার কথা। আমি তোমাকে ত আমার সাহায্য লইতে আহবান করি নাই, তুমি আমায় অবলম্বন করিলে কেন ?