পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৫১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দোষস্বীকারের ফল একদা, জৰ্ম্মনি দেশের কোনও রাজা ফ্রান্স দেশে পর্য্যটন করিতে গিয়াছিলেন। এই দেশে টুলো নামক স্থানে, সৈন্তসংক্রান্ত অস্ত্রশাল ছিল। একদিন, তিনি, অস্ত্রশাল দেখিবার নিমিত্ত, ঐ স্থানে উপস্থিত হইলেন । অস্ত্রশালার তত্ত্বাবধায়ক, সবিশেষ যত্ন ও সম্মান সহকারে তাহাকে সমস্ত দেখাইলেন ; তত্ত্বাবধায়কের বিনীত ও সৌজন্তপূর্ণ ব্যবহার দর্শনে, রাজা সাতিশয় প্রীতিপ্রাপ্ত হইলেন । অস্ত্রশালাদর্শন সমাপ্ত হইলে, তত্ত্বাবধায়ক, রাজার সম্মুখবর্তী হইয়া, বিনীত বচনে নিবেদন করিলেন, মহারাজ, অত্রত্য কারাগারে যে সকল অপরাধী রুদ্ধ আছে, তন্মধ্যে আপনি যাহাকে নির্দিষ্ট করিবেন, আপনকার সম্মানার্থে আমি তাহাকে কারামুক্ত করিতে ইচ্ছা করি। এ বিষয়ে আপনকার যেরূপ অভিরুচি হয়। রাজl, তত্ত্বাবধায়কের প্রস্তাবে সম্মত হইলেন ; এবং লোক নির্দিষ্ট করিবার নিমিত্ত তত্ত্বাবধায়কের সমভিব্যাহারে কারাগারে প্রবেশ করিলেন । তিনি একে একে প্রত্যেক কয়েদীর নিকটে উপস্থিত হইলেন ; এবং কি কারণে তুমি কারাগারে রুদ্ধ হইয়াছ, এই জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন । প্রত্যেক কয়েদী বলিল, মহারাজ, আমার কোন অপরাধ নাই ; বিনা অপরাধে আমি কারাগারে রুদ্ধ হইয়াছি। মহারাজ, অবিচার, অত্যাচার ও মিথ্যাভিযোগের জ্বালায় এ দেশে বাস করা ভার হইয়া উঠিয়াছে। রাজা ও রাজপুরুষের বিচারবিমুখ হইয়া, সমস্ত কাজ করিয়া থাকেন; তাহাদের অত্যাচারে এ দেশে আর তিষ্ঠিতে পারা যায় না। কেহ কাহারও নামে মিথ্যা অভিযোগ উপস্থিত করিলে, রাজপুরুষেরা সে বিষয়ে কোনও অনুসন্ধান না করিয়াই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দণ্ড দেন ; আর রাজপুরুষেরা কাহারও উপর কোনও কারণে অসন্তুষ্ট হইলে, তাহার নামে মিথ্যা অভিযোগ উপস্থিত করাইয়া দণ্ড দিয়া থাকেন । অবশেষে রাজা, এক কয়েদীর নিকটে উপস্থিত হইয়া, তাহার কারারুদ্ধ হইবার কারণ জিজ্ঞাসিলে, সে বলিল, মহারাজ, আমি অতি দুষ্টস্বভাব ব্যক্তি ; স্বভাবদোষে কত লোকের উপর কত অত্যাচার ও কত লোকের কত অনিষ্ট করিয়াছি, বলিতে পারি না । প্রকৃত কথা বলিতে গেলে, আমার মত দুরাত্মা আর নাই। পূৰ্ব্বে আমি আপন দোষ বুঝিতে পারিতাম না ; এক্ষণে সবিশেষ অনুধাবন করিয়া স্পষ্ট বুঝিতে পারিয়াছি, আমার যেরূপ গুরুতর অপরাধ, সে বিবেচনায় আমি লঘু দণ্ড পাইয়াছি। এই বলিতে বলিতে, তাহার নয়নযুগল হইতে প্রবল বেগে বাষ্পবারি বিগলিত হইতে লাগিল । ৬৩