পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qし* বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী—শিক্ষা এক মাস অতীত না হইতেই, আর এই এক অভিযোগ উপস্থিত হইল, মণিবেগম নয় লক্ষ টাকার হিসাব দেন নাই । পীড়াপীড়ি করাতে, বেগম কহিলেন, হেষ্টিংস সাহেব যখন আমাকে নিযুক্ত করিতে আইসেন, আমোদ উপলক্ষে ব্যয় করিবার নিমিত্ত, তাহাকে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা উৎকোচ দিয়াছি। হেষ্টিংস কহিলেন, আমি ঐ টাকা লইয়াছি বটে, কিন্তু সরকারী হিসাবে খরচ করিয়া, কোম্পানির দেড় লক্ষ টাকা বঁাচাইয়াছি। হেষ্টিংস সাহেবের এই হেতুবিন্যাস কাহারও মনোনীত হইল না। এক্ষণে স্পষ্ট দৃষ্ট হইল, অভিযোগ করিলেই গ্রাহ হইতে পারে। এই সুযোগ দেখিয়া, নন্দকুমার হেষ্টিংসের নামে এই অভিযোগ উপস্থিত করিলেন যে, গবর্ণর জেনেরল বাহাদুর, সাড়ে তিন লক্ষ টাকা লইয়া, মণিবেগমকে ও আমার পুত্র গুরুদাসকে, মুরশিদাবাদে নবাবের রক্ষণাবেক্ষণ কার্য্যে, নিযুক্ত করিয়াছিলেন। ফ্রান্সিস ও তৎপক্ষীয়ের প্রস্তাব করিলেন, সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত, নন্দকুমারকে কোন্সিলের সম্মুখে আনীত করা যাউক । হেষ্টিংস উত্তর করিলেন, আমি যে সভার অধিপতি, তথায় আমার অভিযোক্তাকে আসিতে দিব না ; বিশেষতঃ, এমন বিষয়ে অপদার্থ ব্যক্তির ন্যায় সম্মত হইয়া, গবর্ণর জেনেরলের পদের অমর্য্যাদা করিব না ; এই সমস্ত ব্যাপার সুপ্রীম কোটে প্রেরণ করা যাউক । ইহা কহিয়া, হেষ্টিংস, গাত্ৰোখান করিয়া, কেন্সিলগুহ হইতে চলিয়া গেলেন ; বারওয়েল সাহেবও তাহার অনুগামী হইলেন । তাহাদের প্রস্থানের পর, ফ্রান্সিস ও তৎপক্ষীয়েরা নন্দকুমারকে কোন্সিলগুহে আহবান করিলে, তিনি এক পত্র পাঠ করিয়া কহিলেন, মণিবেগম যখন যাহা ঘুস দিয়াছেন, তদ্বিষয়ে এই পত্র লিখিয়াছেন। কিছু দিন পূৰ্ব্বে, বেগম গবর্ণমেণ্টে এক পত্র লিখিয়াছিলেন ; সর জন ডাইলি সাহেব, নন্দকুমারের পঠিত পত্রের সহিত মিলাইবার নিমিত্ত, ঐ পত্র বাহির করিয়া দিলেন । মোহর মিলিল, হস্তাক্ষরের ঐক্য হইল না। যাহা হউক, কোন্সিলের মেম্বরের নন্দকুমারের অভিযোগ যথার্থ বলিয়া স্থির করিলেন এবং হেষ্টিংসকে ঐ টাকা ফিরিয়া দিতে কহিলেন । কিন্তু তিনি তাহাতে কোনও মতে সম্মত হইলেন না । এই বিষয়ের নিম্পত্তি না হইতেই, হেষ্টিংস নন্দকুমারের নামে, চক্রান্তকারী বলিয়, সুপ্রীম কোর্টে অভিযোগ উপস্থিত করিলেন । এই অভিযোগের কিছু দিন পরেই, কামাল উদ্দীন নামে এক জন মুসলমান এই অভিযোগ উপস্থিত করিল, নন্দকুমার এক কাগজে আমার নাম জাল করিয়াছেন। সুপ্রীম কোর্টের জজেরা, উক্ত অভিযোগ গ্রাহ করিয়া, নন্দকুমারকে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করিলেন । ফ্রান্সিস ও তৎপক্ষীয়েরা জজদিগের নিকট