পাতা:বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ধৈর্য্য ও সৎসাহস
৭১

গৃহে যাইয়া গোপনে অর্থসাহায্য করিয়া আসিতেন। এইরূপ গোপনে অর্থসাহায্য করিবার কারণ এই যে, এই সকল লোক অবস্থাহীন বটে, কিন্তু ভদ্রপরিবারভুক্ত, সুতরাং প্রকাশ্যে অর্থসাহায্যের প্রার্থনা করা নিশ্চিত তাহাদের পক্ষে ঘোরতর লজ্জাজনক বিষয়।

 বিদ্যাসাগর মহাশয় ১২৫৯ সালের গ্রীষ্মবকাশে কলিকাতা হইতে যাত্রা করিয়া পদৱজে ৬ ক্রোশ অন্তর চণ্ডীতলা গ্রামের এক পান্থনিবাসে রাত্রি যাপনপূর্ব্বক পরদিবস পদব্রজেই তথা হইতে ২০ ক্রোশ অন্তর বীরসিংহে নিজ বাটীতে উপস্থিত হইলেন। তদনন্তর পিতামাতা, ভ্রাতাভগিনী ও প্রতিবেশী বন্ধুবর্গের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন।

 পরদিবস হইতে গ্রামস্থ নিরুপায়দিগকে যথাসাধ্য কিছু কিছু অর্থসাহায্য করিতে লাগিলেন। ইহা দেখিয়া গ্রামের ও পাশ্ববর্ত্তীগ্রামের অনেকে ইঁহাকে ধনশালী বলিয়া স্থির করিলেন। বোধ হয়, এই কারণেই গ্রামস্থ ব্যক্তিদিগের যোগে ৩০ বৈশাখ বীরসিংহের বাটীতে ডাকাইতি হয়। ঐ দিবস সকলে রাত্রি নয়টার পর ভোজনান্তে অতঃপরে শয়ন করিয়াছিলেন, বহির্বাটীতে প্রায় ৩০ জন পুরুষ নিদ্রা যাইতেছিলেন, এতদ্ব্যতীত দুইজন গ্রাম্য চৌকিদারও জাগরিত ছিল। নিশীথ সময়ে বাটীর সম্মুখে প্রায় ৪০ জন লোক ভয়ানক চীৎকার করিয়া উঠিল। এই চীৎকারধ্বনি শ্রবণে সকলেরই নিদ্রাভঙ্গ হইল। তখন দস্যুগণ মশাল জ্বালিয়া মধ্যদ্বার ভাঙ্গিতেছিল, তদ্দর্শনে বিদ্যাসাগর অত্যন্ত ভীত হইলেন। সকলে অলক্ষিত ভাবে খিড়কির দ্বার দিয়া তাঁহাকে লইয়া বাটী হইতে প্রস্থান করিলেন। দস্যুগণ বিদ্যাসাগরকে ধরিতে পারিলে, টাকার জন্য বিলক্ষণ যাতনা দিত। দস্যুরা জ্বলন্ত মশাল ও উন্মুক্ত তরবারি হস্তে চতুর্দ্দিকে বিচরণ করিতে লাগিল। এমন সময়ে ভগবতী দেবী সুযোগ বুঝিয়া উপরে চলিয়া গেলেন। সেই বৎসর ঈশানবাবুর বিবাহের বৎসর। বিবাহের জন্য অলঙ্কারাদি প্রস্তুত হইয়াছিল। ভগবতী দেবী সেই গহনার বাক্স লইয়া যখন নিম্নে অবতরণ করেন, তখন এমনি ঘটিল যে এক প্রবল বাতাসে দস্যুগণের সমস্ত মশাল নির্ব্বাণ প্রাপ্ত হইল। ভগবতী তখন অন্ধকারে নিম্নে অবতরণ করিলেন এবং কৌশলপূর্ব্বক খিড়কীর দ্বার দিয়া গহনার বাক্স লইয়া পলায়ন করিলেন। অনন্তর দস্যুগণ যথাসর্ব্বস্ব লুণ্ঠন করিয়া প্রস্থান করিল। রাত্রিতেই ঘাটাল থানার দারোগার নিকট সংবাদ প্রেরিত হইল। তিনি পরদিন প্রাতে বীরসিংহে আগমন করিয়া পুলিশ কর্ম্মচারিদের প্রথানুসারে গোলমাল করায়, ঠাকুরদাস বলিলেন, “আপনি কুলীন ব্রাহ্মণের ছেলে বলিয়া আপনার মর্য্যাদা রাখিতে পারি, কিন্তু এসম্বন্ধে আপনাকে কিছু দিতে পারি না। অনন্তর ঠাকুরদাস, পরিবারবর্গের কাহারও দ্বিতীয় বস্ত্র ও ঘটী, বাটি, থালা ইত্যাদি না থাকায় এই সকল দ্রব্য ক্রয় করিবার জন্য উদয়গঞ্জ ও খড়ার গ্রামে গমন করিলেন। ইত্যবসরে বিদ্যাসাগর মহাশয় বাটীর সম্মুখে ভ্রাতা ও