বলিবেন যে, তাঁহার মুখনিঃসত অনুশাসনরূূপ অমৃতময় বচনাবলী সতত আমার কর্ণে ধ্বনিত হইয়া আমাকে সৎকার্য্যে প্রণোদিত করিতেছে।”
ভগবতী দেবী সৌজন্য ও সদ্ব্যবহার গুণে যে কেবল বীরসিংহ ও নিকটবর্ত্তী গ্রামের অধিবাসিদের ও আত্মীয় স্বজনের প্রীীতি উৎপাদন করিয়াছিলেন, এরূূপ নহে। তাঁহার সৌজন্য ও সদ্ব্যবহার গুণে একজন বিদেশী ভিন্ন ধর্ম্মাক্রান্ত, উচ্চ রাজকর্মচারী কিরূপ মুগ্ধ হইয়াছিলেন, পাঠকগণ, উপলব্ধি করিয়া দেখুন উল্লিখিত দৃষ্টান্তই তাহার জ্বলন্ত সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে কি না?
একাদশ পরিচ্ছেদ॥ দয়া ও পরোপকার
দুঃখভারাক্রান্ত ও শোকসন্তপ্ত হৃদয়ে শান্তিবারি বর্ষণ করিবার জন্যই করুণাময় পরমেশ্বর মানবহৃদয়ে দয়াগুণ প্রদান করিয়াছেন। দয়ালু ব্যক্তি পৃথিবীর ভূষণস্বরূপ। সমগ্র পৃথিবী তাহার দানের ক্ষেত্র। পথিবীর সকল দেশে, সকল জাতির মধ্যে এবং সকল শাস্ত্রেই দয়ার ভূয়সী প্রশংসা দৃষ্টিগোচর হয়। দানসম্মন্ধে শাস্ত্রে কোন প্রকার মতভেদ দৃষ্ট হয় না। দয়ার কার্ষ্যে জাতি, ধর্ম্ম, কিংবা কুলশীলের বিচার নাই। নিম্নভূূমিতে যেরূপ জল ধাবিত হয়, সেইরূপ দীন দুঃখী দেখিলেই দয়াশীল ব্যক্তির দয়ার স্রোত প্রবাহিত হয়। কত শত কৃপাবান মহাত্মা দয়াপরতন্ত্র হইয়া, পরোপকারকার্ষ্যেে ধন প্রাণ উৎসর্গ করিয়া গিয়াছেন, তাহার ইয়ত্তা নাই। তাঁহাদের কার্য্য দেখিলে বোধ হয়, পরের উপকার করিবার জন্যই যেন তাঁহারা পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। কি ধনী, কি দরিদ্র, মনে করিলে, সকল লোকেই পরের উপকার করিতে পারেন। ধন থাকিলেই যে, পরের উপকার করিতে পারা যায় তাহা নহে; শরীর, মন, বাক্য এবং কার্য্য দ্বারাও অপরের বিস্তর উপকার করা যায়। ফলতঃ যাঁঁহার যেরূপ ক্ষমতা, তিনি সেইরূপে পরের উপকার করিতে পারেন। দয়ালুু ব্যক্তিরা কেবল মানবের উপকার করিয়াই যে ক্ষাত থাকেন, তাহা নহে। জীবমাত্রই তাঁহাদের দয়ার পাত্র। অক্ষম, রুুগ্ন, দুুর্ব্বল এবং বৃদ্ধ ইতর প্রাণী দেখিলেই তাঁহাদের কৃপাসিন্ধু উদ্বেল হইয়া উঠে। দুঃখীর দুঃখমোচন, বিপন্ন ব্যক্তির বিপদুদ্ধার, শোকার্ত্তকে সান্ত্বনা দান, এই সকলই দয়ার কার্য্য। দয়ালুু মহোদয়গণ বিবিধ সদানুষ্ঠান দ্বারা প্রতিনিয়ত জগতের অশেষ কল্যাণ সাধন করিতেছেন।
মনুষ্যজাতির মধ্যে দয়াবৃৃত্তি রমণীহৃদয়ে অধিক পরিস্ফুট দেখিতে পাওয়া যায়। রমণী জাতি দয়া-পূূর্ণিমার নিষ্কলঙ্ক পূূর্ণচন্দ্র। তাঁহাদের দয়ায় স্বার্থরূপ মলিনতার লেশমাত্র নাই। বিদ্যাসাগরজননী ভগবতী দেবীর দয়া কিন্তু সাধারণ রমণী হইতে অনেকাংশে বিভিন্ন ছিল। তাহার দয়া অলৌকিক; তাহা