পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
১৮৩

ভাল এবং বিদ্যাসাগর মহাশয় আপনার পরমবন্ধু, তবে তাঁহাকে অগ্রে কেন না চিকিৎসা করেন?” এইরূপ নানা প্রকার যুক্তিযুক্ত বাদানুবাদের পর, রাজেন্দ্রবাবু, দাদার চিকিৎসা আরম্ভ করিলেন। কয়েক দিবসের পর বিদ্যাসাগর মহাশয়ের শিরঃপীড়া প্রভৃতি রোগের উপশম হইল। রাজেন্দ্রবাবু, অগ্রজ মহাশয়ের পরমবন্ধু রাজকৃষ্ণ বাবুকে মলকণ্টক-পীড়ায় কয়েক দিন ঔষধ সেবন করাইয়া ভাল করেন। ইহা দেখিয়া, অনেকেই রাজেন্দ্রবাবুর ঔষধ সেবন করিতে লাগিল। সৌভাগ্যক্রমে রাজেন্দ্রবাবু অনেক উৎকট ও অসাধ্য রোগ আরোগ্য করিতে লাগিলেন। অগ্রজও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শিক্ষা করিয়া, চিকিৎসা আরম্ভ করিলেন এবং অনেক অনুগত ব্যক্তিদিগকে ঙ্গোমিওপ্যাথি চিকিৎসাব্যবসায়ী করিবার জন্য, রাজেন্দ্রবাবুর নিকট পাঠাইতে লাগিলেন। ঐ সকল ব্যক্তিরা রাজেন্দ্রবাবুর দাতব্য-চিকিৎসালয়ে ভালরূপ শিক্ষা করিয়া, চতুর্দ্দিকে গমন করিয়া, চিকিৎসা-ব্যবসা করিয়া উন্নতি লাভ করিয়াছেন। অগ্রজ মহাশয়, মধ্যম সহোদর দীনবন্ধু ন্যায়রত্নকে পুস্তক ও ঔষধের বাক্স দিয়া, বীরসিংহায় যাইয়া দেশের লোককে চিকিৎসা করিতে বলেন। তিনি দেশে যাইয়া, অনন্যকর্ম্মা ও অনন্যমনা হইয়া, চিকিৎসা করিতে প্রবৃত্ত হইলেন, এবং কতকগুলি লোককে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শিক্ষা দিতে লাগিলেন। অদ্যাপি ইহাঁর অনেক ছাত্র নানা স্থানে অবস্থিতি করিয়া চিকিৎসা করিতেছেন।

 বাবু লোকনাথ মৈত্র, পূর্ব্বে সামান্য বেতনে রাইটারি কর্ম্ম করিতেন। তিনিও দুর্ঘটনাপ্রযুক্ত দাদার সাহায্যে রাজেন্দ্রবাবুর নিকট হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শিক্ষা করিলে পর, অগ্রজ মহাশয় পত্র লিখিয়া কাশীতে রাজা দেবনারায়ণ সিংহের নিকট পাঠাইয়া দেন। তথায় লোকনাথবাবু বিলক্ষণ প্রতিপত্তি লাভ করিয়াছিলেন। একসময়ে কাশীর ম্যাজিষ্ট্রেট আয়রণ-সাইড্ মহোদয়ের পত্নীর অসাধ্য পীড়া হইয়াছিল। নানারূপ চিকিৎসার পর, পরিশেষে লোকনাথবাবুর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় আরোগ্য লাভ করেন।