পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

তফাৎ হইতে তৈল দিত। ইহা দেখিয়া, অগ্রজ মহাশয় স্বয়ং উক্ত অপকৃষ্ট ও অস্পৃশ্য জাতীয় স্ত্রীলোকের মস্তকে তৈল মাখাইয়া দিতেন। নীচবংশোদ্ভবা স্ত্রীজাতির প্রতি অগ্রজের এরূপ দয়া দেখিয়া, তাহারা পরম আহিলাদিত হইয়াছিল এবং কর্ম্মচারিগণ তাঁহার এরূপ দয়া অবলোকনে, তদবধি উহাদিগকে স্পর্শ করিতে ঘৃণা পরিত্যাগ করিল। পরিবেশনের সময়, দাদা স্বয়ং পরিবেশনকার্য্যে প্রবৃত্ত হইতেন দেখিয়া, উপস্থিত ভদ্র-লোকেরাও পরিবেশন করিতেন।

 অন্নসত্রে যাহারা ভোজন করিত, তাহারা অগ্রজের নিকট প্রকাশ করিয়া বলে, “মহাশয়! প্রত্যহ খেচরান্ন খাইতে অরুচি হয়, সপ্তাহের মধ্যে একদিন অন্ন ও মৎস্য হইলে আমাদের পক্ষে ভাল হয়।” একারণ, প্রতি সপ্তাহে এক দিন অন্ন, পোনা মৎস্যের ঝোল ও দধি হইত। ইহাতে ব্যয়বাহুল্য হওয়ায়, দাদা, অকাতরে যথেষ্ট টাকা বৃদ্ধি করিয়াছিলেন। পূর্ব্বে দেশস্থ লোক মনে করিত যে, বিদ্যাসাগর বিদ্যোৎসাহী; একারণ, দরিদ্র বালকদের জন্য অবৈতনিক বিদ্যালয়, বালিকাবিদ্যালয় ও রাখাল-স্কুল স্থাপন করিয়াছেন, এবং দরিদ্রবর্গের রোগোপশমের জন্য চিকিৎসালয় স্থাপন করিয়াছেন। কিন্তু তিনি দরিদ্রগণের প্রতি এতদূর দয়ালু ছিলেন, তাহা কেহই জানিত না। এই অবধি সকলে তাঁহাকে বলিত যে, ইনি দয়াময় অথবা দয়ার সাগর। নীচজাতীয় স্ত্রীলোকদের মাথায় স্বয়ং তৈল মাখাইয়া দেন, ইনি তো মানুষ নন,—সাক্ষাৎ ঈশ্বর। তৎকালে এদেশে সকলেই এই কথার আন্দোলন করিতে লাগিল।

 গবর্ণমেণ্টের অন্নসত্রে দরিদ্রদিগকে কর্ম্ম করাইয়া খাইতে দিত; এজন্য কতকগুলি লোক কর্ম্ম করিবার ভয়ে, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অন্নসত্রে ভোজন করিতে আসিত; তজ্জন্য ক্রমশঃ লোকসংখ্যা বৃদ্ধি হইতে লাগিল। এখানে পীড়িতদিগের চিকিৎসা হইত, এবং রোগিগণের পথ্যের স্বতন্ত্র ব্যবস্থা ছিল। গ্রামস্থ সভ্য-লোকের মধ্যে যাহাদের অবস্থা অতি মন্দ, তাহাদিগকে প্রত্যহ প্রাতে বেলা নয় ঘটিকা পর্যন্ত সিদা দেওয়া হইত। এতদ্ব্যতীত প্রায় কুড়িটি পরিবার প্রত্যহ সিদা লইতে লজ্জিত হইতেন; তন্নিমিত্ত তাহাদিগকে গোপনে