পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

 জননী-দেবী কাশীতে কয়েক দিবস বাস করিয়া, পুনর্বার দেশে প্রত্যাগমন করেন। বাটীতে সমুপস্থিত হইয়া শ্রাদ্ধাদি-কার্য্য সমাপনান্তে আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব, ব্রাহ্মণগণ ও গ্রামস্থ লোকদিগকে ভোজন করাইলেন। বাটীতে যতদিন ছিলেন, ততদিন প্রাতঃকাল হইতে সমস্ত পাক করিয়া দরিদ্রদিগকে ভোজন করাইয়া, স্বয়ং যৎসামান্য আহার করিতেন। মোটা মলিন বস্ত্র পরিধান করিতেন। যে সকল অনাথ পীড়িত, অগ্রজের দাতব্য-চিকিৎসালয়ে আসিত, তাহাদের শুশ্রূষ্যাদিতে বিশিষ্টরূপ যত্নবতী ছিলেন। বাটীতে যে সকল বিদেশীয় বালকবৃন্দ ভোজন করিয়া স্কুলে অধ্যয়ন করিত, সেই সকল বালককে স্বয়ং পরিবেশন করিতেন। যে দিবস জননী স্থানান্তরে যাইতেন, সেই দিবস বালকগণের ভোজনের সুবিধা হইত না। জননী, বাটীর ও বিদেশের বালক সকলকে সমভাবে পরিবেশন করিতেন; কখনও ইতারবিশেষ করিতেন না। একারণ, এ প্রদেশে সকলেই অদ্যাপি জননী-দেবীর প্রশংসা করিয়া থাকেন। দেশস্থ সকলে বলিয়া থাকেন যে, কর্ত্রী ঠাকুরাণীর ঐ পুণ্যপ্রভাবেই বিদ্যাসাগর মহাশয় উহার গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন। দেশের যে কোন জাতির গৃহে কোনরূপ বিপদ্ উপস্থিত হইলে বা কেহ মরিলে, জননী মান আহার পরিত্যাগ করিয়া, তাহাদের সঙ্গে রোদনে প্রবৃত্ত হইতেন। তিনি দরিদ্রদিগকে ভোজন করানই প্রধান ধর্ম্ম বলিয়া মনে করিতেন। যাহাতে অল্পবয়স্ক বিধবা বালিকার বিবাহ হয়, তিনি তদ্বিষয়ে সম্পূর্ণ ইচ্ছা প্রকাশ করিতেন। অল্পবয়স্ক বিধবাকে দেখিলে, নেত্রজলে তাঁহার বক্ষঃস্থল ভাসিয়া যাইত। অনেকে বলিয়া থাকেন, অগ্রজ মহাশয় সমস্ত মাতৃগুণ অধিকার করিয়াছেন। দাদাও ঐরূপ বালিকাকে বিধবা দেখিলে, চক্ষের জলে প্লাবিত হইতেন।

 ১৮৬৯ সালে বিদ্যাসাগর মহাশয় বেথুন বালিকাবিদ্যালয়ের সেক্রেটারির পদ পরিত্যাগ করেন।