পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
২১৫

এবং ঐ বৎসর হইতে দাতব্য এণ্টান্স স্কুল, ডিসপেনসারি ও হাসপাতালের কার্য্য আরম্ভ হয়। ঐ কার্য্য আজও পর্য্যন্ত অবাধে চলিয়া আসিতেছে। অপিচ, দাতার উইল অনুসারে ভোগাধিকারী ও স্থলাভিষিক্ত অভাবে, যাবতীয় সম্পত্তি গবর্ণমেণ্ট নিজ হন্তে তত্ত্বাবধানের ভার লইয়া, দাতার ইচ্ছানুরূপ কার্য্য সকল নিষ্পন্ন করিবেন; এবং ঐ বিষয় প্রিভি কৌন্সেল পর্যন্ত যাইয়া স্থিরীকৃত হইয়াছে। উইলের কোন অংশ রহিত কি পরিবর্ত্তিত হয় নাই। বিদ্যাসাগর মহাশয়, পরোপকারার্থে নিজ ধন ব্যয় করিতে যেরূপ কাতর ছিলেন না, অন্য ব্যক্তিকেও সেইরূপ কার্য্যে ব্রতী করিতেও তাঁহার চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। স্বতঃপরতঃ পরোপকারে যেরূপ ধর্ম্ম, তাহা বিদ্যাসাগর মহাশয় অনুভব করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন। এই বিবরণটী বৈঁচিগ্রামনিবাসী বাবু গোকুলচাঁদ বসু মহাশয়ের প্রমুখাৎ অবগত হইয়াছি।

 সন ১২৭৬ সালের শ্রাবণের শেষে অগ্রজ মহাশয়, জননীদেবীকে কাশীবাস করিবার অন্য প্রেরণ করেন। জননী-দেবী কাশীতে পিতৃদেবের নিকটে কতিপয়দিবস অবস্থিতি করেন; তদনন্তর অন্যান্য তীর্থস্থান পর্য্যটন করিয়া, পুনর্ব্বর কাশীতে সমুপস্থিত হন। মাতৃদেবী, পিতৃদেবকে বলেন, “এখন হইতে এস্থলে অবস্থিতি করা অপেক্ষা আমরা দেশে অবস্থিতি করিলে, অনেক অক্ষম দরিদ্র লোককে ভোজন করাইতে পারিব। দেশে বাস করিয়া প্রতিবাসিবর্গের অনাথ শিশুগণের আনুকূল্য করিতে পারিলে, আমার মনের সুখ হইবে। আমার মৃত্যুর এখনও বিলম্ব আছে, আমি আমার সময় বুঝিয়া আসিব।” আরও তৎকালে পিতৃদেবকে স্পষ্ট করিয়া বলেন যে, “আপনাকে এখনও অনেক দিন বাঁচিতে হইবে, কায়িক অনেক কষ্ট পাইতে হইবে, এত তাড়াতাড়ি তীর্থস্থলে আগমন করা যুক্তিসিদ্ধ হয় নাই। ফলতঃ আপনার মত আমাকে কায়িক কোনও কষ্টানুভব করিতে হইবে না। আমাকে আপনার পরলোকযাত্রা করিবার অনেক পূর্ব্বেই পরলোকে গমন করিতে হইবে, ইহা নিশ্চয় জানিবেন।”