পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিশুচরিত।
১৯

অধিক বয়স হইলে বিদেশের টোলে অধ্যয়নার্থে যাত্রা করিত, কেহ কেহ। জমিদারী সেরেস্তায় কাগজপত্র লিখিতে শিক্ষা করিত।

 পিতৃদেব ইং ১৮২৯ ও বাঙ্গালা ১২৩৫ সালের কার্ত্তিকমাসে গুরুমহাশয় কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় ও অগ্রজকে সমভিব্যাহারে লইয়া, কলিকাতা যাত্রা করিলেন।

 কলিকাতা, বীরসিংহ হইতে প্রায় ২৬ ক্রোশ পূর্ব্বে‌। তৎকালে এখান হইতে কলিকাতা যাইবার ভাল পথ ছিল না; বিশেষতঃ পথে অত্যন্ত দস্য‌ুভয় ছিল। প্রায় মধ্যে মধ্যে অনেকেই ঠেঙ্গাড়ের হাতে পড়িয়া প্রাণ হারাইত - বিশেষ সতর্কতাপূর্বক যাইতে হইত। ঘাঁটাল হইয়া রূপনারায়ণ নদী দিয়া জলপথে নৌকারোহণে কলিকাতা যাইবার উপায় ছিল বটে, কিন্তু দস্য‌ুভয়প্রযুক্ত নৌকায় যাইতে কেহ সাধ্যমতে ইচ্ছা করিত না; সুতরাং পদব্রজেই যাইতে হইল। অগ্রজ মহাশয় সমস্ত পথ চলিতে পরিবেন না বলিয়া, আনন্দরাম গুটিকে সমভিব্যাহারে লাইলেন। যখন চলিতে অক্ষম হইবেন, তখন মধ্যে মধ্যে ঐ বাহক, ক্রোড়ে বা স্কন্ধে করিয়া লইয়া যাইবে। প্রথম দিবস বাটী ছয় ক্রোশ অন্তর পাতুলগ্রামে রাধামোহন বিদ্যাভূষণের বাটীতে উপস্থিত হইলেন। পরদিবস সমস্ত দিনের পর সন্ধ্যার সময়, তথা তইতে দশ ক্রোশ অন্তর সন্ধিপুর গ্রামে রাজচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাটীতে পঁহুছিলেন। পরদিবস প্রাতে শ্য‌াখালা-গ্রামের প্রান্তভাগে যে বাঁধা রাজপথ শালিকা পর্য্যন্ত গিয়াছে, সেই পথ দিয়া গমনকালে অগ্রজমহাশয় পথে মাইলষ্টোন দেখিয়া বলিলেন, “বাবা! এখানে হলুদ বাটবার শিল মাটিতে পোঁতা রহিয়াছে কেন? আর ইহাতে কি লেখার মত চিহ্ন রহিয়াছে?” তাহাতে পিতৃদেব বলিলেন, “ইহাকে মাইল-ষ্টোন বলে। ইহাতে ইংরাজী-ভাষায় নম্বর লেখা আছে। এক মাইল (বাঙ্গালা অৰ্দ্ধ-ক্রোশ) অন্তর এক একটী এইরূপ পাথর পোঁতা আছে।” শ্য‌াখালা হইতে শালিকার ঘাট পর্যন্ত ঐ রূপ পাথরে ইংরাজী অঙ্ক দেখিয়া, অগ্রজ মহাশয় ইংরাজী এক সংখ্যা হইতে দশ পর্য্যন্ত চিনিলেন।