পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
২৪৯

 প্রতিবৎসর ৺দুর্গাপূজার সময় পাঁচ ছয় হাজার টাকার বস্ত্র বিতরণ করিতেন। অপর সময়েও বাটীতে কাপড়ের দোকান সাজাইয়া রাখিতেন। অনাথ, দীন, দরিদ্র প্রভৃতি উপস্থিত হইলে, বিবেচনামতে প্রদান করিতেন। ইহাতেও প্রায় প্রতি বৎসর তিন চারি হাজার টাকা ব্যয় হইত।

 দাদা, নিজে প্রায় আঁব খাইতেন না; কিন্তু প্রতি বৎসর জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ এই তিন মাসে প্রায় ১৫০০ পনর শত টাকার আঁব ক্রয় করিয়া, আত্মীয় লোকের বাটীতে পাঠাইতেন এবং বাটীস্থ লোক ও চাকর, চাকরাণী, মেথর প্রভৃতিকে আপনি দাঁড়াইয়া আঁব খাওয়াইতেন। ঐ সময়ে তাঁহার বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র ও অন্য যে সকল ব্যক্তি আসিতেন, তাঁহাদিগকে নিজের সমক্ষে বসাইয়া আঁব খাওয়াইতেন। আম্রপোস্তার হরিশ্চন্দ্র গুঁই ও শীতল চন্দ্র রায়ের দোকানে স্বয়ং যাইয়া আম্র ক্রয় করিতেন এবং উহাদের দোকানে প্রায় আধা ঘণ্টা বা তিন কোয়াটার বসিয়া, তাহাদের সহিত গল্প করিতেন। উহাদের দোকানের সম্মুখ দিয়া কোন বড়লোক গমন করিলে, তাঁহারা আশ্চর্য্যান্বিত হইতেন। এক সময়ে একটি বাবু বলেন, “মহাশয়, ও স্থানে বসিবেন না, আপনি বড়লোক, উহারা সামান্য দোকানদার।” ইহা শুনিয়া দাদা হাস্য করিয়া বলিলেন, “আমি বড় লোক অপেক্ষা ইহাদের নিকট বসিতে ও গল্প করিতে ভালবাসি।”

 কালীঘাটনিবাসী বাবু ক্ষেত্রমোহন হালদার, বসতবাটী প্রভৃতি সমস্ত সম্পত্তি মহাজন ডিক্রীজারী করিয়া দেন-ডিক্রীতে বিক্রয় করিয়া লইবে জানিয়া, নিরুপায় হইয়া অগ্রজ মহাশয়ের নিকট আসিয়া রোদন করিতে লাগিলেন। ইহাঁর রোদনে তিনি দুঃখিত হন এবং স্বহস্তে টাকা না থাকায়, অপরের নিকট ৪০০৲ টাকা ঋণ করিয়া, তাঁহার মহাজনের ঋণ পরিশোধ করিয়া দেন। দাদার ঐ টাকা প্রাপ্তির আশা ছিল না। কিন্তু তিনি কিছুকাল পরে ঐ টাকা যখন পরিশোধের মানস করিয়াছিলেন, তখন মহাজনের প্রমুখাৎ অবগত হইলেন যে, উক্ত হালদার, ক্রমশঃ ঐ টাকা পরিশোধ করিয়াছেন।