পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

সময় যখন পথে ছাতা মাথায় দিয়া যাইতেন, তখন লোকে মনে করিত যে, একটা ছাতা চলিয়া যাইতেছে। দাদা বাল্যকালে অত্যন্ত খর্ব্ব‌ ছিলেন। অন্যান্য লোকের মস্তক অপেক্ষা জ্যেষ্ঠের মস্তক অপেক্ষাকৃত স্থূল ছিল; তদ্রুপ প্রায় দৃষ্টিগোচর হইত না। একারণ, বাল্যকালে উহাঁকে কলেজের অনেকে “যশোরে কৈ”[১] বলিত এবং কেহ কেহ যশোরে কৈ না বলিয়া, “কসুরে জৈ” বলিত। ইহা শুনিয়া অগ্রজ মহাশয় রাগ করিতেন। ক্রোধোদয় হইলে, তখন তিনি সহসা কথা কহিতে পারিতেন না; যেহেতু, বাল্যকালে তিনি তোত্‌লা ছিলেন।

 অগ্রজ, কলেজে ব্যাকরণের শ্রেণীতে প্রবিষ্ট হইয়া, তর্কবাগীশ মহাশয়ের নিকট প্রত্যহ যাহা পড়িয়া আসিতেন, প্রত্যহ রাত্রিতে তাঁহাকে পিতার নিকট তাহা বলিতে হইত। পিতা, পুত্রের প্রমুখাৎ প্রত্যহ ব্যাকরণের পাঠ শ্রবণ করিতেন। ১০/১৫ দিন পরে তিনি যাহা বিস্মৃত হইতেন, তাহা পিতা অক্লেশে অবিকল বলিয়া দিতেন। পুত্রের নিকট প্রত্যহ শ্রবণ করিয়া, পিতার বিলক্ষণ ব্যাকরণে জ্ঞান জন্মিয়াছিল। দাদা মনে করিতেন যে, পিতৃদেব ব্যাকরণ ভালরূপ জানেন। কারণ, কলেজে তর্কবাগীশ মহাশয় যেরূপ বলিয়া দিতেন, পিতাও সেইরূপ বলিয়া দেন। বস্তুতঃ পিতৃদেব সংস্কৃত-ব্যাকরণ পূর্ব্বে‌ কিছুমাত্র অবগত ছিলেন না। পিতা, প্রত্যহ রাত্রি নয়টার পর কর্ম্মস্থান হইতে বাসায় আসিতেন। যে দিবস রাত্রিতে পড়িতে দেখিতেন, সে দিন পরম আহ্লা‌দিত হইতেন; যে দিন আসিয়া দেখিতেন যে, প্রদীপ জ্ব‌লিতেছে, আর তিনি নিদ্রা যাইতেছেন, সেই দিন ক্রোধান্ধ হইয়া তাঁহাকে অত্যন্ত প্রহার করিতেন। মধ্যে মধ্যে এরূপ প্রহার করায়, জগদ্দুর্লভ সিংহের ভগিনী ও তাঁহার পত্নী বলিতেন, এরূপ ছোট ছেলেকে যদি অতঃপর এরূপ অন্যায়রূপে


  1. যশোহর জেলার কৈ-মাছ ৮/১০ দিন নৌকায় আসিয়া, কলিকাতায় গামলায় কিছুদিন থাকিত; এজন্য ঐ মাছের মাথা মোটা, এবং অপর অংশ সরু হইত।