পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়চারিত।
২৭

প্রহার করেন, তাহা হইলে আপনার এ বাটীতে অবস্থিতি করা হইবে না। কোন্‌ দিন প্রহারে ছেলেটা মরিয়া যাইবে; আমাদের সকলকেই বিপদে পড়িতে হইবে। গৃহস্থ এইরূপ ধমক দেওয়ায়, প্রহারের কথঞ্চিৎ লাঘব হইয়াছিল। রাত্রিতে পড়িবার সময় নিদ্রাকর্ষণ হইলে, তিনি প্রদীপের সর্ষপতৈল চক্ষে লাগাইতেন। চক্ষে তৈল লাগিলে চক্ষু জ্বালা করিত; সুতরাং নিদ্রাকর্ষণ হইত না। পিতা, রাত্রি নয়টার সময় বাসায় আসিয়া পাক করিয়া, উভয়ে ভোজন করিয়া শয়ন করিতেন। শেষ রাত্রিতে পিতার নিদ্রাভঙ্গ হইলে, প্রত্যহ দাদাকে উদ্ভট-কবিতা মুখে মুখে শিখাইতেন। এইরূপে তিনি, পিতার নিকট প্রায় দুই শত সংস্কৃত-শ্লোক শিক্ষা করিয়াছিলেন। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ছিলেন; সুতরাং অন্যান্য বালক অপেক্ষা ভাল পাঠ বলিতে, শব্দ রূপ করিতে, সন্ধি বলিতে ও ধাতু রূপ করিতে পারিতেন; একারণ, অধ্যাপক তর্কবাগীশ মহাশয় সকল ছাত্র অপেক্ষা তাঁহাকে অত্যন্ত ভালবাসিতেন। তর্কবাগীশ মহাশয় তাঁহার প্রতি সন্তুষ্ট হইয়া, প্রত্যহ একটি করিয়া উদ্ভট-কবিতা শিখাইতেন এবং ঐ কবিতার অন্বয় ও অর্থ বলিয়া দিতেন। তর্কবাগীশ মহাশয়ের নিকটেও দাদা প্রায় দুই শত সংস্কৃত শ্লোক শিক্ষা করিয়াছিলেন। ব্যাকরণ-শ্রেণীতে তিন বৎসরের মধ্যে দুই বৎসর পরীক্ষায় উত্তমরূপে পারিতোষিক পাইয়াছিলেন। এক বৎসর অপর একটিী মন্দ বালক ভাল প্রাইজ পাইল দেখিয়া, তাহার মনে এত ক্ষোভ জন্মিয়াছিল যে, “কলেজে আর অধ্যয়ন করিব না, দেশে যাইয়া দণ্ডিপুরে বিশ্বনাথ সার্ব্ব‌ভৌম পিসা মহাশয়ের টোলে অধ্যয়ন করিব,” এই স্থির করিয়াছিলেন। কিন্তু পিতৃদেব, তর্কবাগীশ মহাশয় ও মধুসূদন বাচস্পতির অনুরোধের বশবর্ত্তা হইয়া, কলেজ পরিত্যাগ করিতে পারিলেন না। ঐ বৎসর ভালরূপ প্রাইজ না পাইবার কারণ এই যে, ঐ বৎসর প্রাইস্‌ সাহেব পরীক্ষক ছিলেন। সাহেব ভাল বুঝিতে পারিতেন না। দাদা যাহা উত্তর করিতেন, তাহা ভালরূপ বিবেচনাপূর্ব্ব‌ক করিতেন, তাহা নির্ভু‌ল হইত। যে বালক বিবেচনা