পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

করিবে।” তাহাতে দাদা অনেকগুলি হস্তাক্ষরিত পুঁথি ক্রয় করিয়াছিলেন। সেই সমস্ত পুঁথি অদ্যপি তাঁহার প্রসিদ্ধ লাইব্রেরীতে দেদীপ্যমান রহিয়াছে। অগ্রজ মহাশয়, ব্যাকরণ ও কাব্য-শাস্ত্রে অদ্বিতীয় পণ্ডিত হইয়াছিলেন। যখন দেশে (বীরসিংহায়) আসিতেন, তৎকালে কাহারও বাটীতে আদ্যশ্রাদ্ধ হইলে, কৃতী, নিমন্ত্রণার্থ অগ্রজের নিকট কবিতা রচনা করাইতেন; সমাগত সভাস্থ পণ্ডিতগণ ঐ কবিতা দেখিয়া বলিতেন যে, “এ কবিতা কাহার রচনা?” তাহা শুনিয়া কৃতী বলিতেন, এই বালক রচনা করিয়াছে। সমাগত পণ্ডিতগণ তাঁহার সহিত ব্যাকরণের বিচার করিতেন; বিচারসময়ে তিনি সংস্কৃত-ভাষায় কথা কহিতেন। তজ্জ‌ন্য দেশস্থ পণ্ডিতগণ আশ্চর্য্য‌ হইতেন। ক্রমশঃ দেশে প্রচার হইল যে, বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের পুত্র ঈশ্বরচন্দ্র অদ্বিতীয় পণ্ডিত হইয়াছেন; যেহেতু তিনি বিচারসময়ে সংস্কৃতভাষা অবলম্বন করিয়া কথা কহিয়া থাকেন। তৎকালে দেশীয় পণ্ডিতগণ সংস্কৃতভাষায় কথা কহিতে সম্পূর্ণরূপ সক্ষম ছিলেন না।

 দেশে অনেকে অগ্রজকে কন্যাদান করিবার জন্য বিশিষ্টরূপ যত্ন পাইয়াছিলেন। প্রথমতঃ রামজীবনপুরের আনন্দচন্দ্র অধিকারী সম্বন্ধ স্থির করিয়া যান। তাঁহাদের যাত্রার সম্প্রদায় ছিল; একারণ তাঁহাদিগকে অধিকারী বলিত; তজ্জন্য অগ্রজ মহাশয় তাহদের বাটীতে বিবাহ করিতে অসম্মতি প্রকাশ করেন; এবং তাঁহারা ধনশালী লোক ছিলেন, আমাদের ইষ্টকনির্ম্মিত বাটী নয় দেখিয়া, তাঁহারাও সম্বন্ধ ভাঙ্গিয়া দেন। পরে জগন্নাথপুরে চৌধুরীদের বাটীতে সম্বন্ধ স্থির হইয়াছিল। নানা কারণে সেই স্থানেও বিবাহ ঘটিল না। অবশেষে ক্ষীরপাইনিবাসী শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্য্য মহাশয় আসিয়া বলিলেন, “ঈশ্বর বিদ্বান্‌ হইয়াছেন; সৎপাত্রে কন্যাদান করিতে আমি বাসনা করিয়াছি।” এ প্রদেশের মধ্যে তৎকালে ক্ষীরপাই সর্ব্ব‌প্রধান গ্রাম ছিল। তখন কলের কাপড় ছিল না। উক্ত গ্রামে নানা দেশের লোক আসিয়া, কাপড়ের ব্যবসা করিত। পশ্চিম হইতে হিন্দুস্থানী মহাজনেরা আসিয়া, তথায়