পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়চরিত।
8৩

কেঁচো ও অন্যান্য কৃমি উঠিয়া ভোজনপত্রের নিকটে আসিত; এজন্য তিনি এক ঘটী জল ঢালিয়া দিয়া, কৃমিগুলিকে সরাইয়া দিতেন। ঐ সময় জগদ্দুর্লভ সিংহের বাটীর সম্মুখে তিলকচন্দ্র ঘোষের সোণারূপার খোদাইখানার গৃহ ছিল। তিলকচন্দ্র ঘোষ ও উহার পুত্র রামকুমার ঘোষ অতি ভদ্র লোক ছিলেন। তাঁহারা দাদাকে অত্যন্ত ভাল বাসিতেন। ঐ বাটীর উপরের গৃহে পিতৃব্য কালিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় রাত্রিতে শয়ন করিতেন; উহার নিম্নস্থ গৃহে অগ্রজ মহাশয় রাত্রিতে পাঠ্যপুস্তক পাঠ করিয়া, অধিক রাত্রিতে শয়ন করিতেন। সন্ধ্যার সময় হইতে তাঁহার শয্যায় আমিও শয়ন করিতাম। এক দিবস আমার উদরাময় হওয়ায়, সন্ধ্যার সময় অসাবধানতাপ্রযুক্ত বস্ত্রেই মলত্যাগ করিয়াছিলাম; তজ্জন্য যদি ভোজন করিতে না দেন, এই আশঙ্কায় উহা প্রকাশ করি নাই। অগ্রজ মহাশয় অধিক রাত্রিতে শয়ন করিয়া, তৎক্ষণাৎ নিদ্রাভিভূত হইলেন। প্রাতে নিদ্রাভঙ্গ হইলে দেখিলেন যে, তাহার পীঠ, বুক ও হস্ত প্রভৃতিতে বিষ্ঠা লাগিয়া রহিয়াছে। আমায় কোন কথা না বলিয়া, গাত্র ধৌত করিয়া সমস্ত শয্যা স্বহস্তে কূপোদক দ্বারা প্রক্ষালিত করিলেন। তিনি বাল্যকাল হইতেই পিতামাতার প্রতি ভক্তি এবং ভ্রাতা ও ভগিনীদিগকে যথেষ্ট স্নেহ করিয়া আসিতেছেন। এরূপ পিতৃমাতৃভক্তি ও ভ্রাতৃস্নেহ অন্য কেহ করিতে পারেন না। জননীরও সকল পুত্র অপেক্ষা অগ্রজ মহাশয়ের প্রতি আন্তরিক স্নেহ ছিল।

 বেদান্তের শ্রেণীতে যখন অধ্যয়ন করিতেন, তখন প্রত্যহ ক্লাসের পড়া শেষ করিয়া, শেষবেলায় আমাকে ও মধ্যমাগ্রজ দীনবন্ধুকে ব্যাকরণের শ্রেণী হইতে আনিয়া, নিজের নিকটে বসাইয়া রাখিতেন। একদিন বাচস্পতি মহাশয় আমাকে বলিলেন, “শম্ভু, তুমি আমার নামটী চুরি করিয়াছ কেন?” তাহা শুনিয়া আমি উত্তর করিলাম, “মহাশয়! আমি চুরি করি নাই, বাবা চুরি করিয়াছেন।” ইহা শ্রবণ করিয়া বাচস্পতি মহাশয় পরম আহ্লা‌দিত হইয়াছিলেন, এবং তদবধি প্রত্যহ শেষবেলায় ব্যাকরণ-শ্রেণী হইতে আমায়