পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়চরিত।
৪৭

তাঁহার সহিত বিচারে সকল দর্শনবেত্তাদিগকে পরাস্ত হইতে হইয়াছিল। তাঁহার নিকট দাদা এক বৎসর ভাষাপরিচ্ছেদ, সিদ্ধান্তমুক্তাবলী, কুসুমাঞ্জলি, শব্দশক্তিপ্রকাশিকা প্রভৃতি প্রাচীন ন্যায়গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন। দ্বিতীয় বাৰ্ষিক পরীক্ষার সময় দর্শনশাস্ত্রে সকল ছাত্র অপেক্ষা সর্বোৎকৃষ্ট হন; একারণ দর্শনের প্রাইজ ১০০৲ টাকা পান, এবং সংস্কৃত কবিতা-রচনায় সর্ব্বাপেক্ষা ভাল কবিতা লিখিয়া ১০০৲ টাকা পুরস্কার প্রাপ্ত হন।

 নিমচাঁদ শিরোমণি মহাশয়, ঐ সময় ইহজগৎ পরিত্যাগ করেন। ইহাঁর মৃত্যুতে অগ্রজ মহাশয়, কিছু দিন দুর্ভাবনায় ম্লান হইয়াছিলেন। কয়েক মাস সর্ব্বানন্দ ন্যায়বাগীশ দর্শনশ্রেণীর ছাত্রগণকে শিক্ষা দেন; কিন্তু তিনি ভালরূপ ন্যায় পড়াইতে পারিতেন না। অগ্রজ মহাশয় উদ্‌যোগী হইয়া অধ্যক্ষ মার্শেল সাহেব মহোদয়ের নিকট এই বিষয়ে আবেদন করেন। তজ্জ‌ন্য বিদ্যালয়ের সেক্রেটারি সাহেবের আদেশ হয় যে, কর্ম্মপ্রার্থী দর্শনশাস্ত্রবেত্তা পণ্ডিতগণ আবেদন করুন। পরীক্ষায় যিনি সর্ব্ব‌শ্রেষ্ঠ হইবেন, তিনিই দর্শনশ্রেণীর অধ্যাপক হইবেন। নানাস্থানের পণ্ডিতগণ এই পদপ্রার্থনায় দরখাস্ত করেন। কিন্তু জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চানন প্রথমতঃ আবেদন করেন নাই। অগ্রজ মহাশয়, শালিকায় তর্কপঞ্চাননের টোলে কয়েকবার যাইয়া, তাঁহার স্বাক্ষর করাইয়া, আবেদনপত্র স্বয়ং অধ্যক্ষ সাহেবের হস্তে অৰ্পণ করেন। তর্কপঞ্চানন মহাশয়ের প্রতি তাঁহার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভক্তি ছিল। বিশেষতঃ যৎকালে অলঙ্কারশ্রেণীতে অধ্যয়ন করেন, ঐ সময়ে তাহার সহিত তারানাথ তর্কবাচস্পতি মহাশয়ের বাসায় শাস্ত্রালাপ হইয়া, পরস্পরের প্রতি হৃদ্যতা জন্মিয়াছিল। আর যে বৎসর তিনি ল-কমিটির পরীক্ষা দেন, সেই বৎসর তর্কপঞ্চানন মহাশয়ও ঐ পরীক্ষা দিয়াছিলেন। কর্ম্ম-প্রাথী দর্শনশাস্ত্রবেত্তাগণের মধ্যে জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চানন মহাশয় পরীক্ষায় উৎকৃষ্ট হইয়াছিলেন। তজ্জ‌ন্য পরীক্ষক মহাশয়েরা জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চাননকে কলেজের দর্শনশাস্ত্রের যোগ্য অধ্যাপক স্থির করিয়াছিলেন। কর্ত্তৃ‌পক্ষেরা তাঁহাকে ঐ পদে নিযুক্ত করিলেন।