পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

করিতে আমার কোন আপত্তি নাই, ফলতঃ আমাকে রীতিমত পড়াইতে পারিলেই আমি সম্মত আছি।” ইহা শ্রবণ করিয়া তিনি উত্তর করেন, “ব্যাকরণ, কাব্য, অলঙ্কার, বেদান্ত ও দর্শনশাস্ত্র এবং লীলাবতী ও বীজ। গণিতে দীনবন্ধুর বিশিষ্টরূপ বুৎপত্তি ও অধিকার আছে, অধিক আর কি বলিব, আমা অপেক্ষা দীনবন্ধু কোন বিষয়ে' ন্যূন নহে, বরং অঙ্কশাস্ত্রে বিশেষ ব্যুৎপন্ন।” ইহা শুনিয়া মার্শেল সাহেব গবর্ণমেণ্টে রিপোর্ট করিয়া, মধ্যম সহোদর মহাশয়কে অগ্রজ মহাশয়ের পদে নিযুক্ত করিলেন।

 এই সময় তিনি দুগ্ধ ও তদ্বারা যে সকল খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত হয়, তৎসমস্ত ভোজন করিতেন না। ইহার কারণ এই যে, গাভীদোহনসময়ে বৎসকে আবদ্ধ রাখায়, সেই বৎস স্তন্য-পানার্থে ছটফট্‌ করে; কিন্তু মনুষ্য এমন নৃশংস ও স্বার্থপর যে, তাহার মাতৃদুগ্ধ তাহাকে পান করিতে দেয় না; এইরূপ গাভী দোহন দেখিয়া তাহার অত্যন্ত মানসিক কষ্ট হইত; কখন কখন চক্ষের জলে বক্ষঃস্থল ভাসিয়া যাইত। প্রায় পাঁচ বৎসর কাল তিনি দুগ্ধ ও ঘৃতের দ্বারা প্রস্তুত মিষ্টান্নাদি ভোজন করিতেন না, এবং তৎকালে মৎস্যও পরিত্যাগ করিয়া নিরামিষ ভোজন করিতেন। কিছু কাল এই নিয়মে দিনপাত করেন, পরে জননীদেবীর অনুরোধের বশবর্তী হইয়া, মৎস্য খাইতে বাধ্য হইলেন; কিন্তু তদবধি দুগ্ধ অসহ্য হইল, অর্থাৎ দুগ্ধ পান করিলে ভেদ ও বমি হইত।

 ১৮৪৬ খৃঃ অব্দের এপ্রেল মাসে অগ্রজ মহাশয় মাসিক ৫০ টাকা বেতনে সংস্কৃত-কলেজের আসিষ্টাণ্ট সেক্রেটারির পদে নিযুক্ত হইলেন। অনন্তর তিনি ব্যাকরণের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর অধ্যয়নের নূতন প্রণালী প্রচলিত করিলেন। তদনুসারে অধ্যাপকগণ ছাত্রদিগকে শিক্ষা দিতে প্রবৃত্ত হন। বিদ্যালয়ের কোন কোন শিক্ষক চেয়ারে উপবিষ্ট হইয়া নিদ্রা যাইতেন; ছাত্র- গণের মধ্যে কেহ পাখা লইয়া অধ্যাপককে বাতাস করিত। তিনি এই কুপ্রথা: উঠাইয়া দিলেন। সাড়ে দশটার মধ্যেই অধ্যাপক ও ছাত্রগণকে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হইতে হইবে, এইরূপ নিয়ম করিয়া দিলেন। অতঃপর সেক্রেটারির