পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
বিদ্যাসাগর।

পিতৃভক্ত পুত্রপিতার অনুরোধে আকাক্ষায় জলাঞ্জলি দিলেন। যে পিতার সংসারক্লেশ-লাঘবের জন্য তাঁহার এই পদপ্রার্থনা, সেই পিতা যখন তাহাকে নিষেধ করিতেছেন, তখন কি পিতৃপ্রাণ পুত্র তাহা অগ্রাহ্য করিতে পারেন? পিতা যে তাঁহার একমাত্র আরাধ্য দেবতা এবং মাতাই যে একমাত্র আরাধ্যা দেবী ছিলেন। তাও বটে; আর অদৃষ্টও তাঁহাকে অন্য পথে লইয়া যাইল না। আরও দুইটী বিদ্যা তাহার বাকি ছিল। দর্শনশাস্ত্র পড়া হয় নাই। তিনি জজ-পণ্ডিতের পদ না লইয়া বেদান্ত-শ্রেণীতে প্রবেশ করেন। সেই সময় শম্ভুচন্দ্র বাচস্পতি মহাশয় বেদান্তের অধ্যাপক ছিলেন। বেদান্ত পড়িবার সময় ঈশ্বরচন্দ্র গদ্যরচনায় সর্ব্বোচ্চ হইয়া ১০০ এক শত টাকা পুরস্কার পান। কষ্টের জীবনে দুঃখের অন্ত কি সহজে হয়? সকলেই ভগবানের পরীক্ষা বৈ তো নয়।

 পূর্ব্বে একবার বলা গিয়াছে, তৎকালে ঈশ্বরচন্দ্রের তৃতীয় ভ্রাতা শম্ভুচন্দ্র কলিকাতার বাসায় উপনীত হন। বাসায় একটা লোক বাড়িল; সুতরাং তাঁহার কার্য্যও বাড়িল। এতদুপরি মধ্যম পুত্র দীনবন্ধুর বিবাহ দিয়া ঠাকুরদাস বড় ঋণগ্রস্ত হইয়া পড়েন; কাজেই ব্যয়ের হ্রাস করিতে হইল। এই সময়ের ঘটনার উল্লেখ করিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় এক দিন আমাদিগের কোন বন্ধুর নিকট বলিয়াছিলেন,—“বাল্যকালে আমি অনেক কষ্ট পাইয়াছি; কিন্তু কোন কষ্টকেই এক দিনও কষ্ট বলিয়া ভাবি নাই; বরং তাহাতে আমার উৎসাহ-উদ্যম বৰ্দ্ধিত হইত; কিন্তু ভাইগুলির কোন কষ্ট দেখিলে আমার যে কি অন্তর্যাতনা হইত, তা আর কি ৰলিব!” বিশ্বপ্রেমিক বিদ্যাসাগরের পক্ষে ইহা বিচিত্র কি!

 যখন পিতা ঠাকুরদাস কলিকাতার বাসার ব্যয় কমাইয়া দেন,