পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৫৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অনারেবল দ্বারকানাথ।
৫৩৯

ধিকারিণী হইলে পর, যদ্যপি তাহার চরিত্র কলঙ্কিত হয়, তাহা হইলে হিন্দুশাস্ত্রমতে পুনরায় সে অধিকার হইতে বঞ্চিত হইবে কি না? বিদ্যাসাগর মহাশয় ব্যতীত অপর দুই জন পণ্ডিত বলেন, হিন্দুশাস্ত্রমতে কলঙ্কিত বিধবা বিষয়চ্যুত হইতে পারে।” দ্বারকানাথের এই মত ছিল। কিন্তু তাঁহার এই মত টিকে নাই। দশ জন বিচারক এই মোকদ্দমার বিচারভার গ্রহণ করিয়াছিলেন। দুই জন ব্যতীত কেহই দ্বারকানাথের পক্ষ সমর্থন করেন নাই। পরম বন্ধু রাজকৃষ্ণ বাবু কর্ত্তৃক জিজ্ঞাসিত কইয়া, বিদ্যাসাগর বলিয়াছিলেন,—“আমি অন্যায় কিরূপে বলিব? অন্যায়ই বা শুনিবে কে? আমি অবশ্য ভ্রষ্টাচাবের পক্ষপাতী নহি; কিন্তু এক জন বিষয়ের অধিকারিণী হইলে,কেমন করিয়া বলিব, আবার সে বিষয়চ্যুত হইবে; তাহা হইলে তো নানা কারণে পদে পদে বিষয়চ্যুতির মোকদ্দমা সংঘটিত হইবে।” এ বিষয়ে বিদ্যাসাগরের দূরদর্শিতার পরিচয় নাই সত্য; সমগ্র হিন্দুসমাজ ইহাতে সংক্ষোভিত; কিন্তু বিদ্যাসাগরের দৃঢ় ধারণা ও প্রতীতি ছিল যে, এরূপ অবস্থায় কেহ বিষয়চ্যুত হইতে পারে না। অনেকে বলেন, পতিতা রমণীর বিষয়চ্যুতি আইনসিদ্ধ হইবে, বিদ্যাসাগরের প্রিয় বিধবাবিবাহ ব্রতে কতকটা ব্যাঘাত ঘটিবার সম্ভাবনা, দূরদর্শী বিদ্যাসাগর ইহা বুঝিয়াই দ্বারকানাথের বিরুদ্ধবাদী হইয়াছিলেন। কিন্তু এ কথায় বিশ্বাস করিতে সহজে আমাদের প্রবৃত্তি হয় না। আমরা প্রতিনিয়ত দেখিয়া আসিতেছি, শত্রুর ভ্রূকুটিভঙ্গে, মিত্রের সস্নেহ সম্ভাষণে বা আপনার স্বার্থসাধনের উদ্দেশে বিদ্যাসাগরের কখন কোনরূপ পদস্খলন হয় নাই।

 দ্বারকানাথ প্রায়ই বলিতেন—“বিদ্যাসাগর আমার উন্নতির