পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
৯৯

ও ব্যবসা-বাণিজ্যের তুল্য অধিকার যাহাতে পাওয়া যাইতে পারে তজ্জন্য বৃটিশরাজসরকারের নিকট হইতে সুবিধা আদায় করিবার জন্যই ইঁহারা সরকার বিরোধী প্রতিষ্ঠান হিসাবে কংগ্রেসে যোগদান করে। অন্যদিকে জাতীয় আন্দোলনের দ্বিতীয় ধারায় রহিয়াছে দেশের অগণিত কৃষক, মজুর, দরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়—যাহাদের নিকট স্বাধীনতার অর্থ কেবল বৃটিশশাসন হইতে মুক্ত হওয়াই নহে, বিদেশী শোষক শ্রেণীর স্থলে স্বদেশী শোষক শ্রেণীর প্রতিষ্ঠা নহে। তাহাদের নিকট স্বাধীনতার অর্থ দেশে শোষনহীন শ্রেণীহীন সমাজ-ব্যবস্থা প্রবর্ত্তন। এই দলের মধ্যেই সর্ব্বপ্রথম বৈপ্লবিক চেতনা জাগ্রত হয় এবং ইহারাই বৈল্পবিক কর্ম্মপন্থা অনুসরণ করিয়া আপোষহীন সংগ্রাম চালাইতে থাকে। সুভাষচন্দ্র ইহাদেরই পুরোভাগে থাকিয়া এই বৃহৎ শক্তিকে একটি সুনির্দ্দিষ্ট কর্ম্মধারায় পরিচালিত করেন। তিনি দেশের সম্মুখে আজীবন পূর্ণ স্বাধীনতার আদর্শ তুলিয়া ধরিয়াছেন ও আপোষধীন রণনীতি অকুণ্ঠভাষায় প্রচার করিয়াছেন। বিপ্লবী গণশক্তি তাঁহাকে সেনাপতি হিসাবে গ্রহণ করিয়াছে। তাই তাঁহাকে রাষ্ট্রপতি পদে বরণ করায় যে কেবল একজন বহুনির্য্যাতিত অক্লান্তকর্ম্মী সর্ব্বত্যাগী মুক্তি সাধককে গৌরবান্বিত করা হইল তাহাই নহে, সুভাষচন্দ্র যে বামপন্থী কর্ম্ম-পন্থায় বিশ্বাসী সেই নীতিও জয়যুক্ত হইল। হয়ত কংগ্রেস কর্ত্তৃপক্ষ ভাবিয়াছিলেন সুভাষচন্দ্রকে সভাপতিপদে অভিষিক্ত করিলে সুভাষচন্দ্রও জওহরলালের ন্যায় আজন্মার্জ্জিত বিশ্বাস ও আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়া কংগ্রেসের বৃহৎ নেতৃত্বের একান্ত বাধ্য ভক্ত হইয়া পড়িবেন—কিন্তু তাঁহাদের সে আশা পূর্ণ হয় নাই। সুভাষচন্দ্রের বজ্রাদপি কঠোর ও বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব কাহারও নিকট কোন কারণেই আত্মবিক্রয় করিতে জানে না।