পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
১৫৫

পথের উভয় পার্শ্বে লক্ষ লক্ষ নর-নারী সমবেত হইয়াছিল। আবালবৃদ্ধবনিতা সকলে পাহাড় ও উপত্যকার মধ্য দিয়া রাষ্ট্রপতির শোভাযাত্রার অনুগমন করে। সেইদিন প্রত্যূষে সূর্য্যোদয়ের বহু পূর্ব্বেই পথ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। শত শত লোক গৃহের চাল, পাহাড় ও বৃক্ষোপরি আরোহণ করিয়া শোভাযাত্রার মনোহর শোভা নিরীক্ষণ করে। শোভাযাত্রার অগ্রভাগে এক বিরাটকায় হস্তী হাওদার উপর স্থাপিত ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা বহন করিয়া সর্বাগ্রে চলিতে থাকে। মনে হইতেছিল, বায়ুহিল্লোলে জাতীয় পতাকা যেন জাতীয় সংগীতের সহিত তালে তালে পত্ পত্ শব্দে উড়িতেছে। তৎপরে ২৫টি করিয়া দুই সারিতে ৫০টি হস্তী। প্রত্যেকটি-ই সুসজ্জিত ও নানালঙ্কারভূষিত। ৫০ টি হস্তীর পৃষ্ঠে বিগত ৫০ বৎসরের কংগ্রেস সভাপতিদের এক একখানি প্রতিকৃতি বিরাজ করিতেছিল। মধ্যভাগে রাষ্ট্রপতির প্রতিকৃতিবাহী দ্বিরদ। এই নয়নাভিরাম দৃশ্য অবলোকন করিয়া বিরাট জনতা বিস্ময়বিমূঢ় হইয়া প্রস্তরমূর্তিবৎ অবস্থান করিতেছিল। সেই বিপুলজনসংঘ সুভাষচন্দ্রকে দেখিতে না পাইয়া সুভাষচন্দ্রের প্রতিকৃতির উদ্দেশ্যে ভক্তিপরিপ্লুতচিত্তে মস্তক অবনত করিয়া অন্তরের শ্রদ্ধা ঢালিয়া দিল।

 সুভাষচন্দ্র যখন এ্যাম্বুলেন্স যোগে ত্রিপুরী পৌঁছেন তথন তাঁহার শরীরের উত্তাপ ১০৩° ডিগ্রী। অভ্যর্থনা সমিতির চিকিৎসকগণের উপর তাঁহার সুশ্রূষার ভার অর্পিত হয়। সুভাষচন্দ্রের ত্রিপুরী আগমনের পূর্বেই ত্রিপুরীতে রাষ্ট্র হইয়া গিয়াছিল যে তিনি প্রকৃতপক্ষে অসুস্থ নহেন— অসুস্থতার ভান করিতেছেন মাত্র! কংগ্রেসের বড় কর্ত্তারা ইহাকে Political sickness বলিয়া তাঁহাদের সুচিন্তিত অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন! ওয়ার্কিং কমিটির জনৈক প্রাক্তন সদস্য সুভাষচন্দ্রের চিকিৎসকগণকে গোপনে ডাকিয়া লইয়া সত্যই তাঁহার ১০৩° ডিগ্রী জ্বর আছে কিনা এরূপ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতেও সঙ্কোচ বোধ করেন