পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
২২৫

কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে সে প্রতিদানে অমরজীবনের উত্তরাধিকারী হইয়া লাভবান হইবে। ইহাই আত্মার নাতি। জাতিকে বাঁচাইতে হইলে ব্যক্তির মৃত্যু চাই। ভারত স্বাধীন হইয়া গৌরবের সহিত যাহাতে বাঁচে সেজন্য আমাকে আজ মরিতে হইবে।”

 “দেশবাসীর নিকট আমার অনুরোধ—ভুলিও না মানুষের পক্ষে সকলের চেয়ে বড় অভিশাপ পরাধীন হইয়া থাকা। ভুলিও না অন্যায় ও অত্যাচারের সংগে আপোষ করা মহাপাপ। প্রকৃতির এই নিয়ম মনে রাখিও—কোন কিছু পাইতে হইলে অগ্রে কিছু দান করা প্রয়োজন। আরও মনে রাখিও জীবনের শ্রেষ্ঠতম আদর্শ, যে কোন মূল্য দিয়াই অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম করা।”

 কর্ত্তৃপক্ষ বুঝিয়াছিলেন, ইহা সুভাষচন্দ্রের কেবলমাত্র ভীতি প্রদর্শন নহে—ইহার মধ্যে যশ ও সুখ্যাতি অর্জ্জন করিবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা নাই। যে জীবনাদর্শকে বাস্তবে রূপ দিতে গিয়া সুভাষচন্দ্র আজীবন দুঃখও নির্যাতন সহ্য করিয়া অবিরাম সংগ্রাম করিয়া আসিয়াছেন ইহা সেই জীবনাদর্শ-প্রণোদিত স্থির সিদ্ধান্ত। সুভাষচন্দ্র মৃত্যুপণ করিয়া অনশন আরম্ভ করিয়াছেন। তাঁহার সঙ্কল্প হইতে কিছুতেই যে তাঁহাকে নিবৃত্ত করা বাইবে না সরকার ইহা ভাল ভাবেই জানিতেন। অবশেষে যখন অনশনের ফলে সুভাষচন্দ্রের স্বাস্থ্যের অবস্থা গভীর উদ্বেগের সঞ্চার করিল তখন ৫ই ডিসেম্বর সরকার বাহাদুর সুভাষচন্দ্রকে মুক্তি দিতে বাধ্য হইলেন।

 সুভাষচন্দ্রকে কারাগৃহ হইতে মুক্তি দিয়া সরকারের দুর্ভাবনার অন্ত ছিল না। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পক্ষে এই সর্বাপেক্ষা বিপজ্জনক ব্যক্তিটিকে স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও কাজকর্ম করিতে দিলে সাম্রাজ্যবাদের নিরঙ্কুশ শোষণ-শাসন যে অব্যাহত ভাবে চলিতে পারিবে না—যুদ্ধ প্রচেষ্টা যে ব্যাহত হইতে পারে, এই আশঙ্কার বশবর্ত্তী হইয়া সরকার বাহাদুর সুভাষচন্দ্রকে স্বগৃহে অন্তরীণ অবস্থায় থাকিবার আদেশে জারী করিলেন।