পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৬
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

অন্তরীণাবস্থায় ধ্যান-ধারণা ও যোগচর্চ্চায় সুভাষচন্দ্রের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হইত। তিনি মৌনব্রত অবলম্বন করিলেন—আত্মীয় স্বজনের সংগে দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ করিয়া দিলেন। কেশ ও শ্মশ্রুগুম্ফাদি ধারণ করিয়া যোগীর ন্যায় কঠোর তপশ্চর্য্যায় নিমগ্ন রহিলেন। সকলেই ভাবিল, গভর্ণমেণ্টের নির্দ্দয় অত্যাচার ও ক্রমাগত কারাবাস তৎসঙ্গে কংগ্রেসী বড় কর্ত্তাদের অশোভন ব্যবহার কর্মজীবনের প্রতি তাঁহাকে বীতশ্রদ্ধ করিয়া তুলিয়াছে। কাজেই, ১৯৪১ সালের ২৬শে জানুয়ারী তাঁহার রহস্যজনকভাবে অন্তর্ধানের খবর প্রকাশিত হইলে সকলেই নিঃসন্দেহে ধরিয়া লইল যে, শ্রীঅরবিন্দের ন্যায় সুভাষচন্দ্রও রাজনীতিতে বীতশ্রদ্ধ হইয়া সন্ন্যাসব্রত অবলম্বন করিয়াছেন।

 নিঃস্ব ও নির্য্যাতিত ভারতবাসীর দুঃখ ও দুর্দশা মোচনের দুর্বার আকাঙ্ক্ষার অপেক্ষা শেষে কি সুভাষচন্দ্রের জীবনে কৈশোরের স্মৃতি বিজড়িত হিমালয়ের নির্জ্জন ও অনাসক্ত জীবনের আকর্ষণই প্রবলতর হইল? এই প্রশ্নের উত্তর মিলিল ১৯৪২ সালের ২৮শে মার্চ্চ। বিশ্বদূত রয়টায় সংবাদ দিলেন—“টোকিও রেডিওতে বলা হইয়াছে যে, সুভাষচন্দ্র স্বাধীন ভারত কংগ্রেসে যোগদানের জন্য টোকিও যাইবার পথে জাপানের উপকূলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হইয়াছেন।” পরদিনই রয়টার জানাইলেন, এই সংবাদ ভুল—সুভাষচন্দ্র জীবিতই আছেন। কিয়ৎকাল পরে বোম্বাই ক্রনিক্‌ল্ এর লণ্ডনস্থিত সংবাদ-দাতার সংবাদে প্রকাশ পাইল, সুভাষচন্দ্র বার্লিনে আছেন। জার্মানীর ডিক্‌টেটর হের হিটলার তাঁহাকে “India's Fuehrer and Excellency” উপাধিতে ভূষিত করিয়াছেন ও পররাষ্ট্রদূতের মর্য্যাদা ও সম্মান দিয়াছেন। জার্মানীতে থাকাকালীন সুভাষচন্দ্র ভারতীয় যুদ্ধবন্দীদের সংগঠিত করিয়া জাতীয় বাহিনী গঠন করেন। অতঃপর সেখান হইতে তিনি পূর্ব্বএশিয়াস্থ ভারতীয় স্বাধীনতালীগের সভ্যবৃন্দের আহ্বানে সিঙ্গাপুরে পোঁছেন। এইখানেই