পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
২৩৯

চাহেন নাই। সুভাষচন্দ্র সমস্ত “ইজম (ism)” কে ইচ্ছা করিয়াই পরিহার করিয়া ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁহার আদর্শবাদ (idealogy) বর্ণনা প্রসঙ্গে বলিয়াছেন—তাঁহার আদর্শ “Leftism” (বামপন্থী)। ১৯৪০ সালে মার্চ মাসে রামগড়ে আপােষ বিরােধী সম্মেলনে সুভাষচন্দ্র বলেন—“বামপন্থী বলিতে আমরা কি বুঝি সেই সম্বন্ধে কিছু বলা প্রয়ােজন। বর্ত্তমান যুগ আমাদের আন্দোলনের সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী স্তর। অনতিবিলম্বে সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস করা ও ভারতের জনগণের জন্য জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন করা এই যুগে আমাদের কর্ত্তব্য। স্বাধীনতা আনিলে, জাতীয় পুনর্গঠনের যুগ হইবে আমাদের আন্দোলনের সমাজতান্ত্রিক স্তর। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আপােষহীন সংগ্রাম যাঁহারা পরিচালনা করিবেন তাঁহারাই প্রকৃত বামপন্থী।” নিখিল ভারত ফরওয়ার্ড ব্লকের দ্বিতীয় সম্মেলনে সুভাষচন্দ্র বলেন, ভারতীয় বিপ্লব “রক্তাক্ত বিপ্লব” হইবে না। এই বিপ্লব যথাসম্ভব শান্তিপূর্ণ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। জনগণ স্বাধীনতা অর্জনে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হইলেই শান্তিপূর্ণ পরিবর্ত্তন সুনিশ্চিত হইবে।”

 সুভাষচন্দ্র তথাকথিত মার্কস্‌বাদী (Morxist) ছিলেন না। তিনি দেশকাল অনুযায়ী মার্কস্‌বাদকে সংশােধিত করিয়া গ্রহণ করিবার পক্ষপাতী ছিলেন। জমিদারীপ্রথার বিলােপসাধন, ভূমির জাতীয়করণ, কৃষি ও শ্রমিকদিগের উন্নতির জন্য রাষ্ট্রের বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনার ব্যবস্থা এইসব তিনি চাহিয়াছেন। তিনি চাহিয়াছেন, শ্রমিক ও কৃষকের একটি শক্তিশালী দল ক্ষমতার অধিকার করিয়া পরিবর্ত্তনকালে কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার পরিচালনা করিবে। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির সমন্বয় প্রতিভায় সমস্ত আধুনিক মঙ্গলজনক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্রিক আদর্শের কল্যাণময় নীতিই ভারতীয় পরিবেশে ও সংস্কৃতিরাগে রঞ্জিত হইয়া আদর্শ ভারতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও রাষ্ট্র দর্শনের সৃষ্টি হইবে। এই একান্ত অভিলাষ ও সাধনমন্ত্রেই সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছেন।