পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪২
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

বাদের উচ্ছেদ সাধনের প্রতিই সর্বাগ্রে মনোনিবেশ করিয়াছেন। হরিপুরা কংগ্রেসে তিনি বলিয়াছেন—“সমাজতন্ত্রবাদ আমাদের বর্ত্তমানে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নহে। তথাপি সোশ্যলিজম গ্রহণ কল্পে ভারতকে প্রস্তুত করিবার জন্য সমাজতন্ত্রবাদের প্রচার প্রয়োজন।” অতএব, সুভাষচন্দ্রের সমগ্র কার্যাবলি বিচার না করিয়া তাঁহাকে ফ্যাসিস্ত বলা অমার্জনীয় অজ্ঞতা মাত্র।

 কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি হিসাবে সুভাষচন্দ্র দুই প্রধান কাজে শক্তিনিয়োগ করেন (১) স্বদেশবাসীদিগকে সংঘবদ্ধ করা —ঐক্য ও সংগঠনের বাণী প্রচার। (২) সংগ্রাম আরম্ভ করিবার জন্য গান্ধীজিকে সম্মত করা। প্রথমটির জন্য সুভাষচন্দ্র “ঝটিকা সফর” করেন। সমগ্র ভারত ভ্রমণ করিয়া তিনি এই কথাই বলিয়াছেন—“আমাদের সম্মিলিত দাবী পূরণের চাপ দিবার উপযুক্ত সময় উপস্থিত হইয়াছে। আমাদের দাবী অগ্রাহ্য করিবার ক্ষমতা বর্ত্তমানে ব্রিটেনের নাই। বর্ত্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির এই অপূর্ব সুযোগ যদি আমরা গ্রহণ করি, তবে অচিরে সংগ্রাম ব্যতীতই আমরা স্বাধীনতা লাভ করিতে পারিব। এই সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণকল্পে আমাদিগকে সমস্ত শক্তি সুসংহত ও সুপরিচালিত করিতে হইবে।” কিন্তু সংগ্রাম আরম্ভ করিবার জন্য গান্ধীজিকে তিনি রাজী করিতে পারিলেন না। ১৯৩৮ সালে ইয়োরোপ হইতে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়া তিনি গান্ধীজির নিকট যান। গান্ধীজির এক কথা, সংগ্রামের জন্য দেশ প্রস্তুত নহে। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের “যুক্তরাষ্ট্র পরিকল্পনা” সংশোধিত আকারে গ্রহণ করিবার আগ্রহ কোন কোন কর্ত্তৃস্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের মনে জাগিয়াছে সুভাষচন্দ্র সেই সময়ে ইহা বুঝিতে পারেন। কংগ্রেসের প্রধানদের মধ্যে নিয়মতান্ত্রিকতার প্রতি এই ক্রমবর্দ্ধমান ঝোঁক দেখিতে পাইয়া তিনি প্রবল প্রতিবাদ জ্ঞাপন করিয়া দেশবাসীকে সাবধান করিয়া দেন। মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করিয়া কংগ্রেস যে কিঞ্চিৎ ক্ষমতা লাভ করিয়াছে, তাহার ফলে কংগ্রেসের এক অংশে ক্ষমতালোলুপতা ও আদর্শচ্যুতি দেখা