পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৪
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

সৈনিকই চাহেন না—তিনি চাহেন বিপ্লবী নারী ও বিপ্লবী পুরুষ— বিদ্রাহীদের দল যাহারা আত্মঘাতী বাহিনীতে (Suicide, squads) যোগ দিতে প্রস্তুত—যাহাদের কাছে মৃত্যু ধ্রুব। এমন বিদ্রোহী আমি চাই যাহারা নিজেদের শোণিত স্রোতে শত্রুকে নিমজ্জিত করিতে কৃতসঙ্কল্প। মুক্তি-দেবী এই দাবী লইয়া তোমাদের দ্বারে উপস্থিত—তোমরা আমাকে তোমাদের রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দিব। স্বাধীনতার দাবী ইহাই।” নেতাজীর মর্মস্পর্শী আবেদন সমবেত জনতার মধ্যে আনিয়া দিল আত্মবলিদানের দুর্জয় সঙ্কল্প। সকলে সম্মিলিত কণ্ঠে চীৎকার করিয়া উঠিল—“আমরা প্রস্তুত। আমরা আমাদের রক্ত দিব।” নেতাজী বলিলেন, “ভাবাবেগের বশে তোমরা যে সম্মত হইবে আমি তাহা চাহি না। আমি কেবল সত্যিকারের বিপ্লবীদের অগ্রসর হইয়া এই আত্মঘাতী বাহিনীতে যোগদানের শপথ গ্রহণ করিতে বলি। মনে রাখিও এই বাহিনীতে যোগদানের অর্থ স্বাধীনতাদেবীর নিকট আত্মবলিদানের প্রতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর করা।” প্রকাণ্ড হলঘরের প্রত্যেকটি কোণ হইতে সমবেত কণ্ঠের উত্তর আসিল—“আমরা স্বাক্ষর করিতে প্রস্তুত।” বজ্র গম্ভীর স্বরে নেতাজী কহিলেন—“নিজের মৃত্যুর পরওয়ানা স্বাক্ষর সাধারণ কালীতে হয় না। তোমাদের নিজেদের রক্তে এই স্বাক্ষর করিতে হইবে।” জনগণের মধ্যে এক অদ্ভুত সাড়া পড়িয়া গেল। প্রত্যেকেই নিজের রক্তে স্বাক্ষর করিয়া আত্মঘাতী বাহিনীর প্রথম শহীদ হইতে চায়। “পড়ি গেল কাড়াকাড়ি,—আগে কেবা প্রাণ করিবেক দান, তারি লাগি তাড়াতাড়ি।” তারপর বহুক্ষণ ধরিয়া চলিল নিজেদের রক্তে নিজেদের মৃত্যুর পরওয়ানা স্বাক্ষর।

 সকলের মনে নেতাজী যে কী উন্মাদনা সৃষ্টি করিয়াছিলেন এই ঘটনায় তাহার পরিচয় পাওয়া যাইবে। নেতাজীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নেতাজীর আহ্বানে মন্ত্রমুগ্ধ প্রবাসী ভারতীয়গণ মরণ-মহোৎসবে মাতিয়া উঠিয়াছিল।