পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৪
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

 মহাত্মাজি, আপনাকে আমি নিশ্চিতরূপে বলিতে পারি যে, এই বাধাবিঘ্ন-পরিকীর্ণ পথে যাত্রা করিবার পূর্বে আমি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ইহার দোষগুণ, ফলাফল সমস্ত বিচার করিয়া দেখিয়াছি। এতদিন যথাশক্তি দেশবাসীর সেবা করিয়া অবশেষে দেশদ্রোহী সাজিবার বা কেহ আমাকে দেশদ্রোহী বলিতে পারে এইরূপ সুযোগ দিবার বাসনা আমার আদৌ ছিল না। দেশবাসীর ভালবাসা ও উদারতা আমাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়াছে—এই সম্মান ও মর্য্যাদা যে কোন দেশকর্মীর পক্ষেই অতীব শ্লাঘার বস্তু। উপরন্তু, দেশে আমি এমন একটি দল গঠন করিয়াছি যাহাতে আমি বহু আদর্শনিষ্ঠ ও কর্মকুশল দেশসেবীর অকুণ্ঠ সহযোগিতা লাভ করিয়াছি—যাহারা আমাকে একান্তরূপে বিশ্বাস করিতেন। এই দুর্গম লক্ষ্যপথে যাত্রা করিয়া আমি কেবল নিজের জীবন ও ভবিষ্যৎই বিপন্ন করি নাই আমার পার্টির ভবিষ্যৎও অন্ধকার করিয়াছি। যদি আমার বিন্দুমাত্র আশা থাকিত যে বাহিরের সাহায্য ব্যতিরেকেই ভারতের স্বাধীনতা অর্জ্জন করা সম্ভব তাহা হইলে এই সঙ্কটময় মুহূর্ত্তে আমি কখনই দেশত্যাগী হইতাম না। যদি এমন আশা থাকিত যে আমাদের জীবৎকালেই বর্ত্তমান যুদ্ধের ন্যায় ভারতের স্বাধীনতা অর্জ্জনের পক্ষে আর একটি সুযোগ মিলিবে তাহা হইলেও আমি এ সময়ে ভারত ত্যাগ করিতাম না।

 চক্রশক্তির সম্বন্ধে আমাকে একটি প্রশ্নের জবাব দিতে হইবে। ইহা কি সম্ভব যে আমি জাপানীদের দ্বারা প্রতারিত হইয়াছি? আমার বিশ্বাস সকলেই স্বীকার করিবেন যে পৃথিবীতে ব্রিটীশ রাজনীতিকগণই (politicians) সর্বাপেক্ষা ধূর্ত্ত ও চতুর। যে ব্যক্তি আজীবন ব্রিটিশ রাজনীতিকদের সংস্পর্শে আসিয়াছে ও তাহাদের সহিত নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চালাইয়াছে, অন্য কোন দেশের রাজনীতিকদের দ্বারাই সে প্রতারিত হইতে পারে না। ব্রিটীশ রাজনীতিকেরাই যখন আমাকে প্রলুব্ধ করিতে