পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
৪৯

জঘন্যতম কারাগারসমূহের অন্যতম। শ্রীযুক্ত দিলীপ কুমার রায়কে এক পত্রে তিনি লিখিয়াছিলেন, “আমার বিশ্বাস দীর্ঘ মেয়াদী বন্দীর পক্ষে সব চেয়ে বড় বিপদ এই যে আপনার অজ্ঞাতসারে তাকে অকালবার্দ্ধক্য এসে ধরে; তুমি ধারণাই করতে পারবে না কেমন করে মানুষ দীর্ঘকাল কারাবাসের ফলে ধীরে ধীরে দেহে ও মনে অকালবৃদ্ধ হয়ে যেতে থাকে।” মান্দালয়ের অভিজ্ঞতা সুভাষচন্দ্রকে এরূপ বিচলিত করে যে ভবিষ্যতে তিনি ভারতীয় বন্দীশালার অবস্থা ও শাসন প্রণালীর উন্নতি বিধান করিতে চেষ্টা করিবেন বলিয়া সঙ্কল্প করেন। শ্রীযুক্ত দিলীপকুমার রায়কে উক্তপত্রে তিনি লিখেন, “এতদিন জেলে বাস করার পর কারাশাসনের একটা অমূল্য সংস্কারের একান্ত প্রয়োজনের দিকে আমার চোখ খুলে গেছে এবং ভবিষ্যতে কারাসংস্কার আমার একটী কর্ত্তব্য হবে।” তিনি আরও লিখেন, “যতদিন জেলের মধ্যে স্বাস্থ্যকর ও সামাজিক বিধি-ব্যবস্থার বন্দোবস্ত না হয় ততদিন কয়েদীর সংস্কার হওয়া অসম্ভব এবং ততদিন জেলগুলি আজকালকার মত নৈতিক উন্নতির পথে অগ্রসর না হয়ে অবনতির কেন্দ্র হয়েই থাকবে।”

 সুভাষচন্দ্র নীরবে ও নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করিয়া যাইতে ভালবাসিতেন। তাঁহার সহকর্ম্মীদের ও তিনি নিষ্কাম সেবাব্রতে দীক্ষা দিয়াছিলেন। আদর্শনিষ্ঠা সুভাষচন্দ্রের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সুভাষচন্দ্র বলিতেন, “যে জাতির idealism (আদর্শ প্রীতি) আছে সে জাতি তার আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য যন্ত্রণা ক্লেশ সানন্দে বরণ করিয়া লইতে পারে। আদর্শের প্রতি আমাদের তেমন শ্রদ্ধা নাই বলিয়াই আমরা দলগত ক্ষুদ্র স্বার্থ লইয়া মাতিয়া থাকি—স্বীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মকলহে প্রবৃত্ত হই।” দেশের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে মতবিরোধ—কর্ম্মীদের মধ্যে প্রভুত্ব বা নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব সুভাষচন্দ্রকে বড় বেশী আঘাত দিত। দক্ষিণ কলকাতা জাতীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীযুক্ত ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের