পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
৭১

অভিযান নহে। দায়িত্বশীল কর্মক্ষম যে সকল তরুণ-তরুণী চরিত্র সুগঠিত করিয়া দেশের কাজে নিজেকে বিলাইয়া দিতে চায়, ইহা তাহাদেরই আন্দোলন। নূতন সমাজ, নূতন রাষ্ট্র, নূতন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা, মানুষের মধ্যে নূতন ও উচ্চতর আদর্শনিষ্ঠা জাগাইয়া তোলা যুব অন্দোলনের উদ্দেশ্য। এই অশান্ত, অসন্তুষ্ট, বিদ্রোহী মন যার আছে, যে ব্যক্তি বর্ত্তমান ও বাস্তবের অবগুণ্ঠন সরাইয়া মহত্তর ও সমৃদ্ধতর জীবনের দৃষ্টি ও আস্বাদ পাইয়াছে, সেই ব্যক্তিই যুব-অন্দোলনের অর্থ হৃদয়ঙ্গম করিয়াছে এবং যুবক সমিতি গঠনের অধিকারী হইয়াছে। যে প্রতিষ্ঠান বা অন্দোলনের মূলে স্বাধীন চিন্তা বা নূতন প্রেরণা নাই তাহা তরুণের প্রতিষ্ঠান বা আন্দোলন বলিয়া অভিহিত হইতে পারে না।

 রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শরীরগত ও শিক্ষাদীক্ষাগত— যুব-আন্দোলনের এই পাঁচটি দিক। এই আন্দোলনের লক্ষ্য দ্বিধা-বিভক্ত। একটি ধ্বংস ও বিদ্রোহের দিক—অপরটি সৃষ্টি ও গঠনের দিক। চিন্তাজগতে একটা ভাব-বিপ্লব আনিতে হইবে। ভাল ও মন্দ সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা বদ্ধমূল হইয়া আছে তাহার পরিবর্ত্তন করিতে হইবে। সকল মিথ্যা মাপকাঠি চুর্ণ বিধবস্ত করিয়া ফেলিয়া নূতনভাবে জীবনের মূল্য নিরূপণ করিতে হইবে। এইভাবে ধ্বংস ও সৃষ্টির কাজ একসঙ্গে চলিবে। ধ্বংস ভাল নয়, গঠনই ভাল এবং ধ্বংস না করিয়া গঠন করা সম্ভব একথা মনে করিলে অত্যন্ত ভুল করা হইবে। আবার ধ্বংসই ধ্বংসের লক্ষ্য একথা মনে করাও ভুল। জীবনের কোন একটি ক্ষেত্রে নব সৃষ্টির পত্তন করিতে গেলেই অনেক জিনিস ভাঙ্গিয়া ফেলিতে হয়। অসত্য, কপটতা ও ভয়-বন্ধনকে কোনমতেই মানিয়া চলা যায় না। যখন আমাদের কর্ত্তব্য শুধু সম্মুখে অগ্রসর হওয়া, তখন পশ্চাতের মুখ চাহিয়া পিছনে পড়িয়া থাকিলে চলিবে না। সৃষ্টির দেবতা ভাঙ্গনের মহারথে বিজয় কেতন উড়াইয়া প্রবল ঝঞ্ঝার মধ্য দিয়াই অগ্রসর হয়।