পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙ্গালীর উৎপত্তি প্ৰথম পরিচ্ছেদগ্ধ অনেকে, বাঙ্গালীর উৎপত্তি কি ? এই প্রশ্ন শুনিয়া বিস্মিত হইতে পারেন। অনেকের ধারণা আছে যে, বাঙ্গালায় চিরকাল বাঙ্গালী আছে, তাহাদিগের উৎপত্তি আবার খুঁজিয়া কি হইবে ? তাহাদিগের অপেক্ষা শিক্ষায় যাহারা একটু উন্নত, তাহারা বিবেচনা করেন, বাঙ্গালীর উৎপত্তি ত জানাই আছে ; আমরা প্ৰাচীন হিন্দুগণ হইতে উৎপন্ন হইয়াছি। যে জাতি বেদপাঠ করিত, সংস্কৃতভাষায় কথা কহিত, যে জাতি মহাভারত ও রামায়ণ, পুরাণ ও দর্শন, পাণিনির ব্যাকরণ, কালিদাসের কাব্য, মনুর স্মৃতি ও শাক্যসিংহের ধৰ্ম্ম সৃষ্টি করিয়াছিল, আমরা সেই জাতির সন্তান ; এ কথা ত জানাই আছে । তবে আবার বাঙ্গালীর উৎপত্তি খুজিয়া কি হইবে ? এ কথা সত্য, কিন্তু বড় পরিষ্কার নাহে ; লোকসংখ্যা গণনায় স্থির হইয়াছে যে, যাহাদিগকে বাঙ্গালী বলা যায়, যাহারা বাঙ্গালাদেশে বাস করে, বাঙ্গালাভাষায় কথা কয়, তাহাদিগের মধ্যে অৰ্দ্ধেক মুসলমান। ইহারা বাঙ্গালী বটে, কিন্তু ইহারাও কি সেই প্রাচীন বৈদিকধৰ্ম্মাবলম্বী জাতির সন্ততি ? হাড়ি, কাওরা, ডোম ও মুচি ; কৈবৰ্ত্ত, জেলে, কেঁচি, পলি, ইহারাও কি তঁহাদিগের সন্ততি ? তাহা যদি নিশ্চিত না হয়, তবে অনুসন্ধানের প্রয়োজন আছে। কেবল ব্ৰাহ্মণ কায়স্থে বাঙ্গালা পরিপূর্ণ নহে, ব্ৰাহ্মণ কায়স্থ বাঙ্গালীর অতি অল্প ভাগ । বাঙ্গালীর মধ্যে যাহারা সংখ্যায় প্রবল, তাহাদিগেরই উৎপত্তিতত্ত্ব অন্ধকারে সমাচ্ছন্ন । যে প্রাচীন হিন্দুজাতি হইতে উৎপন্ন বলিয়া আমরা মনে মনে স্পৰ্দ্ধা করি, তঁাহারা বেদে আপনাদিগকে আৰ্য্য বলিয়া বৰ্ণনা করিয়াছেন। এখন ত অনেক দিনের পর ইউরোপ হইতে ‘আৰ্য' শব্দ আসিয়া আবার ব্যবহৃত হইতেছে। প্রাচীন হিন্দুরা আৰ্য ছিলেন ; অথবা তাহাদিগের সন্তান। এ জন্য আমরা আৰ্য্যবংশ । কিন্তু এই আৰ্য্য শব্দ আর বেদের আৰ্য্য শব্দ ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। বৈদিক ঋষিরা বলেন, ব্ৰাহ্মণ, ক্ষত্ৰিয়, বৈশ্য, এই তিনটি আৰ্য্যবর্ণ। এখনকার পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা এবং তঁহাদিগের অনুবৰ্ত্তী হইয়া ভারতীয় আধুনিকেরাও বলিয়া থাকেন, ইংরেজ, ফরাসী, জৰ্ম্মান, রুষ, যবন, বঙ্গদর্শন, ১২৮৭, পৌষ