পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাহুবল ও বাক্যবল N8N এইখানে ; ইহার উপর আর আপীল নাই। বাহুবল-— পশুর বল ; কিন্তু মনুষ্য অন্যাপি কিয়দংশে পশু, এ জন্য বাহুবল মানুষ্যের প্রধান অবলম্বন । কিন্তু পশুগণের বাহুবলে এবং মনুষ্যের বাহুবলে একটু গুরুতর প্রভেদ আছে। পশুগণের বাহুবল নিত্য ব্যবহার করিতে হয়---মনুষ্যের বাহুবল নিতা ব্যবহারের প্রয়োজন নাই । ইহার কারণ দুইটি। বাহুবল অনেক পুশুগণের একমাত্র উদরপুত্তির উপায়। দ্বিতীয় কারণ, পশুগণ প্রযুক্ত বাহুবলের বশীভূত বটে, কিন্তু প্রয়োগের পূর্বে প্রয়োগসম্ভাবনা বুঝিয়া উঠে না। এবং সমাজবদ্ধ নহে বলিয়া বাহুবলপ্রয়োগের প্রয়োজন নিবাবণ করিতে পারে না । উপন্যাসে কথিত আছে যে, এক বনের পশুগণ, কোন সিংহ কৰ্ত্তক বন্য পশুগণ নিত্য হত হইতেছে দেখিয়া, সিংহের সঙ্গে বন্দোবস্ত করিল যে, প্ৰত্যহ পশুগণের উপর পীড়ন করিবার প্রয়োজন নাই-একটি একটি পশু প্ৰত্যহ তঁাহার আহার জন্য উপস্থিত হইবে । এ স্থলে পশুগণ সমাজনিবদ্ধ মনুন্যের ন্যায় আচরণ করিল—সিংহকর্তৃক বাহুবলের নিত্য প্রয়োগ নিবারণ করিল। মনুষ্য বুদ্ধি দ্বারা বুঝিতে পারে যে, কোন অবস্থায় বাহুবল প্ৰযুক্ত হইবার সম্ভাবনা । এবং সমাজিক শৃঙ্খলের দ্বারা তাহার নিবারণ করিতে পারে। রাজা মাত্ৰই বাহুবলে রাজা, কিন্তু নিত্য বাহুবলপ্রয়োগের দ্বারা তঁহাদিগকে প্ৰজাপীড়ন করিতে হয় না। প্ৰজাগণ দেখিতে পায় যে, এই এক লক্ষ সৈনিক পুরুষ রাজার আজ্ঞাধীন ; রাজাজ্ঞার বিরোধ তাহদের কেবল ধ্বংসের কারণ হইবে । অতএব প্ৰজা বাহুবল প্রয়োগ সম্ভাবনা দেখিয়া, রাজাজ্ঞাবিরোধী হয় না । বাহুবলও প্রযুক্ত হয় না । অথচ বাহুবল প্ৰয়োগের যে উদ্দেশ্য, তাত সিদ্ধ হয় । এ দিকে এই এক লক্ষ সৈন্য যে রাজার আজ্ঞাধীন, তাহারও কারণ প্ৰজার অর্থ অথবা অনুগ্রহ। প্ৰজার অর্থ যে রাজার কোষগত বা প্ৰজার অনুগ্ৰহ যে র্তাহার হস্তগত, সেটুকু সামাজিক নিয়মের ফল । অতএব এ স্থলে বাহুবল যে প্ৰযুক্ত হইল না, তাহার মুখ্য কারণ মানুষ্যের দূরদৃষ্টি, গৌণ কারণ श्é । আমরা এ প্ৰবন্ধে গৌণ কারণটি ছাড়িয়া দিলেও দিতে পারি। সামাজিক অত্যাচার যে যে বলে নিরাকৃত হয়, তাহার আলোচনায় আমরা প্ৰবৃত্ত । সমাজনিবন্ধ न छशेंट्ल সামাজিক অত্যাচারের অস্তিত্ব নাই । সমাজবন্ধন সকল সামাজিক অবস্থার নিত্য কারণ । যাহা নিত্য কারণ, বিকৃতির কারণানুসন্ধানে তাহা ছাড়িয়া দেওয়া যাইতে পারে । ইহা বুঝিতে পারা গিয়াছে যে, এইরূপ করিলে আমাদিগের শাসনের জন্য বাহুবল প্রযুক্ত হইবে -এই বিশ্বাসই বাহুবল প্রয়োগ নিবারণের মূল ! কিন্তু মনুষ্যের দূরদৃষ্টি সকল সময়ে সমান নহে--সকল সময়ে বাহুবল প্রয়োগের আশঙ্কা করে না । অনেক সময়েই র্যাহারা সমাজের মধ্যে তীক্ষদৃষ্টি, তঁাহারাই বুঝিতে পারেন যে, এই এই অবস্থায়