পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

॥৹

চিন্তাগ্রন্থি মোচন্‌ করিবার প্রয়াস আছে—তাহা সকল মানুষেরই আত্মচেতনার মূলে বিদ্যমান। সাহিত্যই হউক, কিংবা অপর যে-কোন সাক্ষাৎ চিন্তা বা সমস্যার বস্তুই হউক—সেই সকলের মূল্য শেষ পর্য্যন্ত যে আমাদের আধ্যাত্মিক ভাব ও অভাবের দ্বারাই নিরূপিত হয়, তাহ স্বীকার করিতেই হইবে। আমি এই কয়টিতে সেই ভাব ও অভাবের সম্বন্ধে যতটুকু আলোচনা যে ভাবে করিয়াছি তাহাতে আমার প্রাণকেই প্রামাণ্য করিয়াছি, অর্থাৎ, তাহা একান্তই ব্যক্তিগত ধ্যান-কল্পনার ফল; এজন্য, এগুলিকে খাঁটি ‘রচনা’ হিসাবেই আমি পাঠকগণের প্রাণের ঠিকানায় পাঠাইয়া দিলাম।

 ‘বাঙালীর অদৃষ্ট’ শীর্ষক যে প্রবন্ধটি সর্বশেষে সন্নিবিষ্ট হইয়াছে, তাহার সম্বন্ধেও দুই একটি কথা বলিবার আছে। এই প্রবন্ধে আমি যাহা লিখিয়াছি, তাহা আদে ঐতিহাসিক গবেষণা নয়; আমি ইহাতে জাতিহিসাবে বাঙালীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য-নির্ণয়ের যে চেষ্টা করিয়াছি, সে পক্ষে—ধর্ম্ম, সমাজ, ও সাহিত্যে তাহার অন্তর্জীবনের যে ধারা আজিও সমান বহিয়া চলিতেছে, এবং গত শতাব্দীতে প্রবল পরধর্ম্মের সহিত প্রথম সংঘর্ষে তাহার যে পরিচয় আরও পরিস্ফুট হইয়া উঠিয়াছে—তাহার উপরেই প্রধানত নির্ভর করিয়াছি। সেই চরিত্রের সকল লক্ষণ মিলাইয়া দেখিবার সামর্থ্য বা অবকাশ আমার হয় নাই; তথাপি, আমার বিশ্বাস, বাঙালীর যে ইতিহাস এখনও লেখা হয় নাই—সেই ইতিহাস যখন সম্পূর্ণ তথ্য-প্রমাণ সহকারে লিখিত হইবে; যখন, আমি যাহাকে 'অদৃষ্ট’ বলিয়াছি তাহা ‘দৃষ্ট’ হইবে, তখন ভিন্ন উপায়ে লব্ধ আমার এই জ্ঞান ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত বলিয়া মনে হইবে না। ইদানীস্তন কালে যে কয়টি অনন্যসাধারণ প্রতিভায় জাতির সেই বৈশিষ্ট্য অতিশয় লক্ষণীয়