পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ কথা

হইবে, তবে এই স্বল্প কালের জন্য আমাদের এই জাগৃতি ঘটিল কেন? আমাদের দেশে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথের জন্ম হইল কেন? বিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদে যখন বয়স অল্প ছিল, প্রবল জীবনানুভূতি যখন মৃত্যুকে স্বীকার করিত না, তখন সে যুগের সেই ঘূর্ণিবাত্যায় বাঙালীর বাস্তুভিটার ভিত্তিমূল যখন টলিতে আরম্ভ করিয়াছিল—আত্ম ও পর উভয়বিধ শত্রুর প্রচণ্ড আক্রমণে যখন ভিতরে ও বাহিরে আগুন লাগিয়াছিল—তখনও আশা করিতাম, এ জাতি মরিবে না; শ্মশানে শব লইয়া সাধন করার অভ্যাস ইহার আছে, তাই বিভীষিকার সকল প্রহরে ইহার প্রাণশক্তি অটুট থাকিবে, ভিখারী হইয়াও সে অমৃতের স্বাদ ভুলিবে না। কারণ, তখনও উনবিংশ শতাব্দীর সেই নবজন্মের ঘটনা দূরবর্ত্তী হয় নাই—বঙ্কিম-বিবেকানন্দ-বিদ্যাসাগরের করম্পর্শ এ জাতির বক্ষে তখনও শীতল হয় নাই। তাই মনে হইত, যে মাটিতে এই সকল অমর প্রাণ অঙ্কুরিত হইয়াছে, সে মাটিতে জীবনের অমর বীজ নিহিত আছে, মৃত্যু তাহাকে ধ্বংস করিতে পারিবে না। আজ আর সে ভরসা পাইতেছি না; দিকে দিকে মৃত্যুর বাতাস বহিতেছে, জাতির জীবনীশক্তি নিঃশেষ হইয়া আসিতেছে, যেন জীবধর্ম্মও লোপ পাইতেছে।

 কালরাত্রির এই প্রহরে, এই সর্ব্বগ্রাসী অন্ধকারের মধ্যে, ঘোর ঘনঘটাক্ষুব্ধ আকাশতলে দাঁড়াইয়া আমি বাংলা সাহিত্য ও বাঙালী প্রতিভার বর্ত্তমান বা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কি আলোচনা করিব? আমার মত ব্যক্তিও—যে চিরদিন ভাব-চিন্তার জগতে ঘুরিয়াছে, যে জীবনের কর্ম্মশালার ঘর্ষাক্ত ধূলিধূসর দেহের অভিজ্ঞতা সভয়ে বর্জ্জন করিয়াছে— স্বপ্ন ও জাগরণের মধ্যবর্ত্তী একটা জীবনই যাহার কাম্য ছিল—সেও