বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৬
বিবিধ কথা

অতিশয় অপরোক্ষভাবে ইহাকে অনুভব করিয়াছেন, এবং সেই অনুভূতির মধ্যে, যেন তাঁহারও অজ্ঞাতসারে, ইহার প্রতি এক সুগভীর মমত্ব ফুটিয়া উঠিয়াছে। শরৎ-সাহিত্যের যাহা উৎকৃষ্ট অংশ, যাহা খাঁটি সৃষ্টিধর্ম্মী, তাহা একটা বিশেষ যুগের বিশেষ কাল্‌চারের প্রেরণা হইতেই জন্মলাভ করিয়াছে, তাঁহার দৃষ্টি সেই কাল্‌চারেরই ফল। আধুনিক সভ্যতা ও আধুনিক শিক্ষার আঘাতে এই কাল্‌চারেরই একটা আত্মিক শক্তি তাঁহার সৃষ্ট নরনারীর চরিত্র ভাস্বর করিয়া তুলিয়াছে। তাঁহার উপন্যাসে যে সকল সমস্যার আবির্ভাব দেখা যায়, সমস্যাহিসাবে আধুনিক চিন্তার ক্ষেত্রে তাহাদের মূল্য স্বতন্ত্র। এই সকল সমস্যার দ্বারা সেই প্রাচীন প্রাণ-মনের তলদেশ যে ভাবে আলোড়িত হইয়াছে—প্রতিক্রিয়ার মুখে তাহার যে শক্তি ও সম্পদ প্রকাশ পাইয়াছে, শরৎচন্দ্র তাহারই আরতি করিয়াছেন। ইহাই সে সাহিত্যের রস। যাঁহারা সে রসের রসিক নহেন, এবং যাঁহারা বাঙালী-জীবনের সেই ভাবধারা হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়াছেন, তাঁহারা এই একান্ত বাঙালী-প্রাণ ও বাঙালী-প্রতিভার গৌরব নির্দ্ধারণ করেন বিদেশী সংস্কার ও বিদেশী চিন্তাপদ্ধতির আদর্শে। তাঁহারা ভুলিয়া যান যে, যাহাকে প্রাচীন সংস্কারের মোহ ও দুর্ব্বলতা বলিয়া তাঁহারা নাসাকুঞ্চিত করেন, শরৎচন্দ্রের অধিকাংশ নায়ক-নায়িকার চরিত্র-মহিমার মূলে আছে সেই সংস্কারের দুর্ল্লঙ্ঘ্য শাসন। সকল জাতির মানুষের পক্ষেই সামাজিক বা নৈতিক সমস্যার একটা সাধারণ রূপ আছে; কিন্তু চিন্তা বা জ্ঞানের দিক দিয়া যাহা সার্ব্বভৌমিক, প্রাণের দিক দিয়া তাহা এক নহে। এই প্রাণের দিকই সাহিত্যের দিক, শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের নরনারী সমস্যা পীড়িত আন্তর্জ্জাতিক নরনারী নয়; তাহা যদি হয়, তবে তিনি সাহিত্য