পাতা:বিবিধ কথা.djvu/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাতির জীবন ও সাহিত্য ১৩ t গণ্ডি হইতে উদ্ধার করিতে পারে । তিনি বাঙালীর মধ্যে মনুষ্যত্বের একান্ত অভাব লক্ষ্য করিয়াছিলেন ; পরবর্তী কালের কবির ভাষায়, “শুধু দিনযাপনের প্রাণধারণের গ্লানি,—লাভক্ষতি টানাটানি, অতি ক্ষুদ্র ভগ্ন অংশভাগ, কলহ সংশয়” তাহার জীবনে অতিশয় প্রবল হইতে দেখিয়াছিলেন ; অতি হীন স্বার্থপরতাই তাহার অধঃপতনের মূল বলিয়া বুঝিয়াছিলেন । ইহার ঔষধস্বরূপ, স্বজাতি ও স্বদেশ-প্রেমকেই তিনি অপেক্ষাকৃত সহজ অথচ উদার সাধনমার্গ বলিয়া দৃঢ় বিশ্বাস করিয়াছিলেন। এ বিষয়ে তাহার দৃষ্টি ঋষির মতই ছিল, তিনিই সৰ্ব্বপ্রথম সত্যকার যুগধৰ্ম্মকে ধরিতে পারিয়াছিলেন । মনুষ্যজীবনের মহিমাও তিনি যেমন বুঝিয়াছিলেন, তেমনই ইহাও বুঝিয়াছিলেন যে, এ যুগে মনুষ্যত্ব-সাধনের অন্য পন্থা নাই। অত:পর উৎকৃষ্ট কবি-প্রতিভার সাহায্যে তিনি ইহাকেই রূপে ও রসে একটি সৰ্ব্বজনস্বদয়বেদ্য মূৰ্ত্তি দিয়াছিলেন—মনের উপলব্ধিকে প্রাণের প্রতিমায় পরিণত করিয়াছিলেন। এখানে ইহাও স্মরণ রাখিতে হইবে যে, বঙ্কিমচন্দ্রের এই জাতীয়তা-ধৰ্ম্ম বা “বন্দে মাতরম-মন্ত্র বিলাতী ন্যাশনালিজম নয় ; ইহা অতিশয় আধুনিক হইলেও—ইহার মূলে যুরোপীয় প্রভাব থাকিলেও, বঙ্কিমের প্রতিভা ইহাকে ভারতীর উপাদানে নূতন করিয়া স্বষ্টি করিয়াছিল। ইহাতে স্থল বাস্তব বা ব্যবহারিক সত্যের বহুতাও যেমন ছিল, তেমনই ভারতীয় হিন্দুমনের শ্রেষ্ঠ আকুতির কিছুমাত্র লাঘব হয় নাই। ইহাকেই বলে— স্বষ্টি-প্রতিভা ! মনীষার সঙ্গে উৎকৃষ্ট কবিদ্যুষ্টির এই মিলন হইয়াছিল বলিয়াই সে যুগের বাঙালীর ইতিহাসে এমন একটা নবজীবনপ্রয়াস সম্ভব হইয়াছিল। এমনই করিয়া আমরা সেদিন আসন্ন মন্বন্তরের স্বচনামাত্রে মৃত্যুকে