পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভণ্ডভুলমামার বাড়ী Տ8Տ এপাশের ঘরটাতে । রান্নাঘর কোথায় হবে ? বোধ হয় উঠোনের এক পাশে ওই সজনে গাছটার তলায় । ভন্ডুলামামা ছেলেমেয়ে নিয়ে যখন এসে বাস করবে, তখন এদের উঠোনে কি আর এমন জঙ্গল থাকবে । ছেলেমেয়েরা ছাটােছটি দৌড়োদৌড়ি করে খেলবে, হয়ত বাড়ীতে সত্যনারায়ণের সিন্নি দেবে পাণি মায় কি সংক্রান্তিতে। পাকুরপাড়ের এ জংলী চেহারা তখন একেবারে বদলে যাবে যে ! আমার মামার বাড়ীর এ-পাড়াতে এক ঘর লোক বাড়বে।-ও-পাড়া থেকে খেলা ক’রে ফেরবার পথে, সন্ধ্যে হয়ে গেলেও আর ভাবনা থাকবে না - ওদের বাড়ীতে আলো জবলবে ছেলেমেয়েরা কথা বলবে, কিসে আর তখন ভয় ? দিব্যি क्र6छ याद । আরও বছর দই কেটে গেল । থাড ক্লাসে পড়ি । মামার বাড়ী একাই গেলাম । একাই এখন সব জায়গায় যাই । ভগাঙ্গুলমামার বাড়ীর ছাদ-পেটানো হয়ে গিয়েচে, সিমেন্টের মেজে, দালানের বাইরে রোয়াক হয়েছে কবে আমি দেখিনি তো ! রোয়াকের ওপর কেমন টিনের ঢাল ছােদ ! কেবল একটি খানি এখনও বাকি, দরজা জানালায় এখনও কপাট বসানো হয়নি। বাঃ, ভণ্ডভুলমামার বাড়ী তাহলে হয়ে গেল ! ভপ্ৰভুলমামা নাকি আজকাল বড় সদখোর হয়ে উঠেচেন, মাঝে মাঝে গাঁয়ে আসেন, চড়া সদে লোকজনকে টাকা ধার দেন, বাড়ী দেখােশানো করেন, আবার চলে যান। মাস-কতক পরে আবার কাবলীওয়ালার মত চড়াও হয়ে সদ আদায় করেন । গাঁয়ের লোক তাঁর নাম রেখেচে, রত্নদত্ত । তারপর এল একটা সাদীঘ ব্যবধান । ছেলেবেলার মত মামার বাড়ীতে আর তত যাইনে, গেলেও এক-আধাদিন থাকি । সেই এক-আধাদিনের মধ্যে পথে যেতে যেতে হয়ত দেখি, জঙ্গলের মধ্যে ভন্ডুলামামার বাড়ীটা তেমনি জনহীন পড়ে আছে-বনজঙ্গল চারিপাশে আরও গভীরতর, কেউ কোনদিন ও বাড়ীতে পা দিয়েচে বলে মনে হয় না’, ‘‘একটা ছন্নছাড়া লক্ষীছাড়া চেহারা, শীতের সন্ধ্যায়, বিষরি দিনে, চৈত্র-বৈশাখের দাপরে কতবার ও-বাড়ীটা দেখোঁচ, সেই একই মাত্তি • • এমনি ক’রে বছর কয়েক কেটে গেল । ক্ৰমে এস্ট্রেস পাস দিয়ে কলকাতায় এসে কলেজে ঢািকলাম । সেবার সেকেন্ড ইয়ারের শেষ, এফ-এ দেব, কি একটা দরকারে মামার বাড়ী গিয়েচি । বোধ করি মাঘ মাসের শেষ । দাপরে পবের ঘরে জানালার ধারে খাটে শয়ে আছি, বোধ হয় একখানা লজিকের বই পড়ােচ । এমন সময় একজন কালো শীণকায় প্রৌঢ় লোক ঘরে ঢাকলেন । বড় মামীিমা বললেন---এই তোর ভণভুলমামা, প্ৰণাম কর । আমার সে ছেলেবেলাকার মনের অনেক পরিবত্তন হয়ে গিয়েছিল-বয়স হয়েচে, কলেজে পড়ি ; নানা ধরনের লোকের সঙ্গে মিশোচি, সরেন বাড়িয্যে ও বিপিন পালের বস্তৃতা শানেচি, সর্বদেশী মিটিঙে। ভলাণ্টিয়ারি করেচি, জীবনের দস্টিভঙ্গীই গেছে বদলে—তখন মনের কোন গভীর তলদেশে আরও