পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শুষ্পডািলমামার বাড়ী S8C Astri sa Kiti ri i আমি গিয়ে ভণ্ডািলমামার কাছে বসলাম । চারিধারে অচেনা মাখের মধ্যে আমায় দেখে ভান্ডািলমামা খাব খাশি হলেন । জিজ্ঞেস করলাম-আপনি কি কলকাতা থেকে আসচেন ? ভণ্ডািলমামা বললেন-না। বাবা, আমি রিটায়ার করেচি আজি বছর পাঁচেক হবে । গাঁয়ের বাড়ীতেই আছি । ছেলেরা কেউ আসতে চায় না । অন্নপ্রাশন শেষ হয়ে গেল। ভন্ডািলমামা কিন্তু মামার বাড়ী থেকে আর নড়তে চান না । চার-পাঁচ দিন পরে কিছ, চাল-ডাল ও বাসি সন্দেশ-রসগোল্লা নিয়ে দেশে রওনা হলেন । পায়ে দেখি কটক থেকে কিনে-আনা বড়মামার সেই পরনো চটি-জাতো জোড়া । আমায় দেখিয়ে বললেন, নবীন কটক থেকে এনেচে, দেখে বড় শাখা হলো, বয়েস হয়েচে, কবে মরে যাব, বললাম তা দাও নবীন, জাতো-জোড়াটা পরনো হলেও এখনও দন-তিন মাস যাবে । বাড়ীতে একজোড়া রয়েচে, আঙলে বড় লাগে ব’লে খালি পায়েই— তিনি বাড়ীর বার হয়ে গেলেন । আমি চেয়ে চেয়ে দেখলাম শীণ্যুকান ভ"ডািলমামা ভারী চাল-ডালের মোটের ভারে একটি সামনের দিকে ঝাকে চটিজ তোর ফটাং ফটাং শব্দ করতে করতে সেন্টশনের পথে চলেচেন । হঠাৎ আমার মনে তাঁর উপরে আমার বাল্যের সেই রহস্যময় স্নেহ ও অন্যকম্পপার অনভতিটকু কতকাল পরে আবার সেন ফিরে এল। আমি চোঁচমে বললামএকটি দাঁড়ান মামা, আপনাকে তুলে দিয়ে আসি ৷ ভন্ডািলমামার পটালিটা নিজের হাতে নিলাম, টিকিট করে তাঁকে গাড়ীতে তুলে দিলাম। ট্রেনে ওঠবার সময় একমাখ হেসে বললেন-যেও না হে একদিন, বাড়ীটা দেখে এস আমার —খাসা করেচি-কেবল পাচিলটা এখনও যা বাকি । কি করি, আমার হাতে আজকাল আর তো কিছ নেই, ছেলেরা নিজেদের বাসার খরচই চালিয়ে উঠতে পারে না-অবিশ্যি ওদের জন্যেই তো সব, দেখি, চেন্টায় আছি-সামনের ভান্ডািলমামার সঙ্গে আর আমার দেখা হয়নি। কিন্তু এর মাস-কতক পরে তাঁর বড় ছেলে হরিসাধনের সঙ্গে কলকাতায় দেখা হয়েছিল । ম্যাকমিলান কোম্পানীর বাড়ীতে চাকরি করে, জিনের কোটি গায়ে, হাতে বইয়ের আকারের খাবারের কৌটা, মাখে একগাল পান-বৌবাজারের ফটপাত দিয়ে বেলা দশটার সময় আপিসে যাচ্চে। আমিই ভন্ডািলমামার কথা তুললাম। হরিসাধন বললে-বাবা দেশের বাড়ীতেই আছেন-আমরা বলি আমাদের সংসারে এসে থাকুন, তাতে রাজী নয়। বদ্ধিসদ্ধি তো কিছ. ছিল না। বাবার, নেইওসারা জীবনে ষা রোজগার করেচেন, ওই জঙ্গলের মধ্যে এক বাড়ী করতে গিয়ে সব নন্ট করেচেন, নইলে আজ হাজার চার-পাঁচ টাকা হাতে জমতো। ও-গাঁয়ে যাবেই বা কে ? রমোঃ, যেমন জঙ্গল তেমনি ম্যালেরিয়া-তাছাড়া লোকজন নেই, অসংখ হলে একটা ডাক্তার নেই-চার-পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে বাড়ীর পিছনে, বেচিতে গেলে এখন ইট-কাঠের দরেও বিক্রি হবে ভেবেচোন ? কে বিভতি শ্রেদ্ঠ গল্প-১০