পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪৬ বিভূতিভূষণের শ্রেষ্ঠ গল্প


নিতে যাবে, পাগল আপনি ।

       আমি বললাম-কথাটা ঠিক বটে। কিন্তু ভেবে দেখ, তোমার বাবা যখন বাড়ীটা প্রথম আরম্ভ করেছিলেন, তখন জাজ্বল্যমান গ্রাম। বাড়ীটা তৈরী করতে এত দেরি হয়ে গেল যে ইতিমধ্যে গাঁ হয়ে গেল শ্মাশান, লোকজন উঠে অন্যত্র চলে গেল, সেই সময় তোমাদের বাড়ীর গাঁথুনিও শেষ হলো। কার দোষ দেবে ?
      তার পরে ভন্ডুলমামার আর কোন সংবাদ রাখিনি অনেক কাল ! বছরতিনেক আগে একবার মেজমামা চেঞ্জে গিয়েছিলেন দেওঘরে । পূজোর ছুটিতে আমিও সেখানে যাই । তাঁর মুখেই শুনিলাম ভন্ডািলমামা সেই শ্রাবণেই মারা গিয়েছেন । অসুখ-বিসুখ হয়ে ক'দিন ঘরের মধ্যেই ছিলেন, কেউ বিশেষ দেখাশুনো করেনি, আর আছেই বা কে গাঁয়ে যে দেখবে ? এ অবস্থায় ঘরের মধ্যে মরে পড়ে ছিলেন, দু-তিন দিন পরে সবাই টের পায়, তখন ছেলেদের টেলিগ্রাম করা হলো। ভন্ডুলমামার এইখানেই শেষ ।
        এর পর আমি আর কখনও মামার বাড়ীর গ্রামে যাইনি, হয়ত আর কোন দিন যাবও না, বাড়ীটাও আর দেখিনি, কিন্তু জ্ঞান হয়ে পৰ্যন্ত যে বাড়ীটা গাঁথা হতে দেখেছি, সেটা আমার মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত স্থান অধিকার করে আছে। আমার কল্পনায় দেশের মামার বাড়ীর গ্রামের, একগলা বনের মধ্যে শীতের দিনের সন্ধ্যায় ভন্ডুলমামার বাড়ীটা একটা কায়াহীন, অথহীন, উদ্দেশ্যহীন রূপ নিয়ে মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে। সেই গাছ-গজানো উঠোনটাতে ঢোকবার পথ বনে ঢাকা, দরজা-জানালার কপাট নেই, থামে থামে কাঠ-থামাল পর্যন্ত গাঁথা হয়েছে।...•
       আমার জীবনের সঙ্গে ভন্ডুলমামার বাড়ীটার এমন যোগ কি করে ঘটল, সেটা আজ ভেবে আশ্চৰ্য হয়ে যাই—আমার গল্পের আসল কথাই তাই। অমন একটা সাধারণ জিনিস কেন আমার মন জড়ে বসে রইল, অথচ কত বড় বড় ঘটনা তো বেমালূম মন থেকে মুছেই গিয়েছে !
        বিশেষ করে এইসব শীতের সন্ধ্যাতেই মনে পড়ে। এইজন্যে যে, পাঁচ বছর বয়সে এই শীতের সন্ধ্যাবেলাতেই বাড়ীটা প্রথম দেখি ।
       
        অবিনাশবাবুর ছাত্রটা মুড়ি নিয়ে এল।