পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

KSFT ఏ8 বা ভালবাসার সন্ধান পাওয়া যায়-তাকে শ্রদ্ধা না করে পারা যায় না।

  • হিমাংশার গাছপালার ওপর ভালোবাসা ছিল সত্যিকার জিনিস। সে ভালো খেতো না, ভালো কাপড়জামা কখনো দেখিনি তার গায়ে-কিন্তু এধরনের সখে-সৰ্বোচ্ছন্দ্য তার কাম্যও ছিল না । তার পয়সার সচ্ছলতা ছিল না। কখনো, টাইশানি করে দিন চালাতো, তাও আবার সব সময় জ্যািটতো না, তখন বন্ধ বান্ধবদের কাছে ধার করতো । যখন ধারাও মিলতো না তখন দিনকতক চন্দননগরে এক মাসীর বাড়ী মাস-খানেক মাস-দাই কাটিয়ে আসতো। কিন্তু পয়সা হাতে হলে কাপড় জামা না। কিনােক, খাওয়া-দাওয়ায় ব্যয় করােক, না। করােক ভালো গাছপালা দেখলে কিনবেই।

মেসে আমাদের ঘরের সামনে ছোট একটা অপরিসর বারান্দাতে সে তার গাছপালার টবগলো রাখতো। গোলাপের ওপর তার তত ঝোঁক ছিল না, সে ভালোবাসতো নানা জাতীয় পাম--বিশেষ করে বড় জাতীয় পামা-আর ভালোবাসতো দেশী-বিদেশী লতা-উহসন্টারিয়া, অতসী, মাধবীলতা, বোগেনভিলিয়া ইত্যাদি । কত পয়সাই যে এদের পেছনে খরচ করেচে। সকালে উঠে। ওর কাজই ছিল গাছের পাট করতে বাসা । শকানো ডালপালা ভেঙে দিচ্চে, গাছ ছেটে দিচ্চে, এ-টবের মাটি ও-টবে ঢালচে । পরোনো টব ফেলে দিয়ে নতুন টবে গাছ বসাচ্চে, মাটি বদলাচ্চে । আবার মাঝে মাঝে মাটির সঙ্গে নানা রকমের সার মিশিয়ে পরীক্ষা করত । এ-সব সম্পবন্ধে ইংরজি বাংলা নানা বই কিনতো-একবার কি একটা উপায়ে ও একই লতায় নীলকলমী ও সাদাকলমী ফোটালে । ভায়োলেটের ছিট ছিট দেওয়া অতসী অনেক কলেট তৈরী করেছিল । বেগনী রঙের ক্লাইসেনথিমামের জন্যে অনেক পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় করেছিল, সবিধে হয়নি । তাছাড়া ও-ধরনের মানষ আমি খাব বেশি দেখিনি, যে একটা খেয়াল বা শখের পেছনে সমস্ত মন প্রাণ ঢেলে দিতে পারে। মানষের মনের শক্তির সে একটা বড় পরিচয় । হিমাংশ বলতো—সেদিন একটা পাড়াগাঁয়ে একজনদের বাড়ী গিয়েচি, বঝলেন ? - তাদের গোলার কাছে তিন বছরের পরোনো নারকেল পাম হয়ে আছে। সে যে কি সন্দের দেখাচে । একটা প্রকান্ড তাজা, সতেজ, সবজি পাম । সমদ্রের ধারে নাকি নারকেলের বন আছে-পাম-এর সৌন্দয্য দেখতে হলে সেখানে যেতে হয় । হিমাংশ প্রায়ই পাম, আর অকিড দেখতে শিবপর বোটানিক্যাল গাডেনে যেতো । আর এসে তাদের উচ্ছবিসিত বণনা করতো । একবার সে একটা এরিকা পাম কিনে আনলে । খাব ছোট নয়, মাঝারি গোছের মাটির টবে বসানো-কিন্তু এমন সন্দের, এমন সতেজ গাছ বাজারে সাধারণত দেখা যায় না। সে সন্ধান করে করে দমদমায় কোন বাগানের মালীকে ঘষে দিয়ে সেখান থেকে কেনে। কলকাতার মেসের বারান্দায় গাছ বাঁচিয়ে রাখা যে কত শক্ত কাজ, যাঁদের অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা সহজেই বক্সতে পারবেন। গোবি মর্যােভমিতে গাছ বাঁচিয়ে রাখা এর চেয়ে সহজ। একবার সে