পাতা:বিভূতি বীথিকা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলে মনে না হলে সে হাসে নি-হাসি চাপাবার চেষ্টা করতে করতে বললেওঃ, মতি-দিদির সেই শাবল তোলার ভঙ্গি দেখে আমার তো-হি-হি-হি- অনঙ্গ-বেী ধমক দিয়ে বললে-আবার হাসে ! --নাও, নাও বামুন-দিদি, রাগ কোরো না-হয়েচে-এখন চলে এখান থেকে বেরিয়ে-বেলা নেই। এতক্ষণ ওদের যেন সেদিকে দৃষ্টি ছিল না—এখন হঠাৎ ঝোপ থেকে উকি মেরে সবাই চেয়ে দেখলে সরাইপুরের বাওড়ের ওপারে নোনাতলা গ্রামের বঁাশবনের আড়ালে কতক্ষণ পূর্বে ‘সূৰ্য অস্ত গিয়েচে, ঘন ছায়া নেমে এসেচে বঁওড়ের তীরে তীরে, বাওড়ের জলের কচুরিপানার দামের ওপর। আবার কি উৎপাত না জানি হয়, সন্ধ্যেবেলা । মাত্র তিনটি মেয়েছেলে তেপান্তর মাঠের মধ্যে । অনঙ্গ-বেী বললে-বাবাঃ- এখন বেবেও এখান থেকে । মতি বললে - বা রে, মেটে আলুটা ? --কি হবে ভাই ? --অত বড় মেটে আলুটা ফেলে যাব ? কাল থাকবে ? এই মন্বন্তবের সময়ে ? কথাটা সকলেরই প্ৰাণে লাগলো। থাকবে না মেটে আলু। আজকাল গ্রামের লোক সব যেন কেমন হয়ে উঠেছে। সন্ধান পাবেই। কােপালী-বেী বললে-তাই করো বামুন দিদি। আলুটি নেওয়া যাকনোক সব হন্যে হয়ে উঠেচে না খেতি পেয়ে । বুনো কচু আলু কিছু বাদ দিচ্চে না, সব্বদা খুঁজে বেডাচ্চে বনে-জঙ্গলে । ওই আলুটা তুললে আমাদের তিন বেলা খাওয়া হবে । আবার সবাই মিলে আলুর পিছনে লাগলো এবং যখন সকলে মিলে গর্ত হতে মেটে আলুটা বের করে উপরে তুলে ধুলো ঝাড়ছে—তখন সন্ধ্যার পাতলা অন্ধকার মাঠ-বন ঘিরে ফেলেছে। মতি মুচিনী নিজেই অত বড ভারি। আলুটা বয়ে নিয়ে চললো, মধ্যে অনঙ্গ-বেী, পেছনে শাবল হাতে কাপালী-বেী । ওরা সেই সন্ধ্যার অন্ধকারে চারিদিকে সশঙ্ক দৃষ্টিতে চাইতে চাইতে গ্রামের মধ্যে এসে ঢুকলো । গ্রামে ঢুকবার আগে অনঙ্গ-বেী বললে-এই ছুড়ি, আজকের কথা ওই সব যেন কাউকে বলিস নৌ 8