পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>ミや বিভূতি-রচনাবলী —ন, কুচো গজা । বেশ মনে আছে, ময়রা বুড়ীর দোকান থেকে । নিতাইএর ঠাকুরমা, মনে আছে ? —খুব । বটতলায় দোকান ছিল । আহা, সে তো কতদিন মরে এসেচে এখানে—তাকে কখনো দেখিনি । —তারপর সেদিন দুজনেই মার খেলুম বাড়ী ফিরে । অত রাত পর্যন্ত তুমি আর আমি ঘাটে বসে ছিলুম পিদিম দেওয়ার পরে । মনে পড়ে যতীনদা ? - —খুব। আমি আর খাইনি। মাস্টম তোকে মারলেন। আমিই বরং উত্তরের কোঠায় —যতীন হঠাৎ খাড়া হয়ে উঠে বসলো। বল্লে—পুষ্প, আমি এখুনি কলকাতায় যাবো— পুষ্প বিস্মিত হয়ে বল্লে—কেন ? —তোর বৌদিদির কিছু হয়েচে । একটা আতনাদ শুনলাম তার গলার। দেখে আলি– পুষ্প, সত্যি বলচি, ও আমায় শান্তি দিলে না। তুই যতই চেষ্টা করিস, আমার ভাগ্য ওর সঙ্গে বাধা । চলুম আমি— g —বা-রে, আমিও বুঝি বসে থাকবো ? দাড়াও— মনে মনে পুষ্প বড় হতাশ হোল । তারও জীবন যেন কেমন । কিছুতেই কি কিছু স্বরাহ হয় না ? সব সময় দেওয়ালের ওপর দিয়ে কোন বিকটমূর্তি কঙ্কাল উকি মারে, অমঙ্গল ভরা দৃষ্টিতে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এত কষ্ট করে আজ সে দীপান্বিত অমাবস্তার সন্ধ্যাটিকে প্রাণপণে সাজালে--সব বৃথা ! নামবার পথে পুষ্প বল্লে—কলকাতায় আসতে পারিনে, কষ্ট হয়। উঃ, দেখেচ কেমন কালে কালো কুয়াশার মতো জিনিস ! মানুষের অর্থলোভ, বিলাসিতা—নানারকম খারাপ চিন্তা— সকলের ওপর লোভ—এই সব এক ধরনের কালো কুয়াশা স্বষ্টি করেচে। ওর মধ্যে দিয়ে আগতে দম বন্ধ হয়ে যায় যেন—সব বড় শহরেই এরকম দেখেচি—এখানে মানুষ সব ভুলে শুধু ভোগ নিয়ে আছে । সেই বাসাবাড়ী-যতীন এর আগেও দুবার লুকিয়ে এসে দেখে গিয়েছিল আশাকে । পুষ্প তা জেনেও কিছু বলেনি। যতীনদা ভাবে, পুষ্প পোড়ারমুখীকে লুকিয়ে কোনো কিছু করা যায় ! যতীনদার বয়স হয়েছে বটে কিন্তু এখনও ছেলেমান্থবি ঘোচেনি । আশার অবস্থা ভাল নয় । নেত্যনারায়ণ ওকে ফেলে আজ মাস চার পাচ হোল চলে গিয়েচে দেশে। “ নিজের গ্রামে গিয়ে সে মুদ্ধির ক্ষ্মেকান খুলেচে-কিন্তু আশার-ফেরবার মুখ নেই। বাড়ীওয়ালীর দ্বয়ায় এবং হাতের দু’একগাছি সোনার চুড়ি বিক্রির টাকায় এতদিন বা হয় চললো। কিন্তু তার মধ্যে বাড়ীওয়ালী নানারকম উপার্জনের ইঙ্গিত করেচে। এক মারোয়াড়ী লোহাওয়ালা তাকে দেখেচে দোতলার ছাদ থেকে — আশা যখন ওদের বাসার তেতলার ছাদে কাপড় তুলতে গিয়েছিল। ৰেলম্বরে না সোদপুরে তার বাগানবাড়ী, মস্ত বাগান—ইত্যাদি। তাকে সছুপদেশও দিয়েচে--এই তো বয়েসখানা চলে যাচ্চে গো—আর দুটো বছর। তার পর কেউ ফিরে চাইবে ? না বাপু বলে, মেয়েমানুষের রূপ আর জোয়ারের জল। হ্যা,