পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান & S) —আপনি পারেন, আমার শক্তি কতটুকু, আমার কাজ নয়। একবার পঞ্চম স্বর্গে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিলুম, চতুর্থস্তরেই অজ্ঞান হয়ে পড়লো। আর আমি চেষ্টা চৰ্বিনি । পুপ একটা জিনিস লক্ষ্য করলে । প্রথমদিন সে প্রণয়দেবীকে যে মূর্তিতে দেখেছিল এ ঠিক সে মূর্তি নয়। প্রণয়দেবীকে আরও তরুণী দেখাচ্ছে, মুখশ্রী আরও সুন্দর । শরীর স্বচ্ছ, সুন্দর, নীলাভ শুভ্ৰ । দেবী বল্লেন -- কি ভাবচ ? —আপনি জানেন কি ভাবচি । -আমার চেহারা এখন যে রকম দেখচে, তখন অন্যরকম দেখেছিলে—তাই তো ? পুষ্প কথাটা জানতো । সে শুনেছিল বহু উচ্চ স্বর্গে অধিবাসীদের কোনো নির্দিষ্ট রূপ নেই । অধিকাংশ সময়েই তারা একটা ডিম্বাকুতি সোনালী আলোর মত - যখন কারো সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন হয় না বা মূর্তি গ্রহণ করবার বিশেষ কোনো আবশ্রাক থাকে না – তখন তারা শুধু একটা চৈতন্য-বিন্দুতে পর্যাবসিত হয়ে এই ডিম্বাকৃতি আলোর মূর্তিতে অবস্থান করেন। কিন্তু প্রয়োজন উপস্থিত গেলে তারা যে কোন মূর্তি ইচ্ছামত ধারণ করতে পারেন —অতি সুন্দর তরুণের রূপ বা মহিমময় গম্ভীর বয়স্ক লোকের রূপ বা পুথিবী-প্রচলিত নানা শাস্ত্র ও ধর্ম-গ্রন্থাদিতে বর্ণিত দেব, দেবী, দেবদূত প্রভৃতির রূপ—যাতে মানুষের স্বজাতায় ও ও স্বদেশীয় ট্র্যাডিশন অনুযায় মৃতিতে তাদের ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে, প্রাণে বল ও উৎসাহ পেতে পারে --ইত্যাদি ইত্যাদি । তবুও ভাল করে দেবীর মুখে শোনবার জন্যে তার কৌতুহল হোল । প্রণয়দেব বল্লেন – দেখ, পৃথিবীতেও এই একই ব্যাপার হয় । আত্মার অবস্থার সঙ্গে বাইরের আরুতি বদলায় । সাধুর একরকম চেহারা, নিম্নস্তরের লোকে আর একরকম । কিন্তু পৃথিবীর স্থল পদার্থের ওপর আত্মার প্রভাব তত কার্যকর হয় না । এখানে তা নয় । এমন কি এপেল ওবেল রূপের পরিবর্তন হয় এখানে। খুব প্রেম বা সহানুভূতির সময় এখানে মুখশ্রী দেখতে দেখতে অপূর্ব স্বন্দর হয়ে ওঠে, ঠিক পৃথিবীর খুব ভাবপ্রবণ, কল্পনাময়ী, অপরূপ রূপসী কিশোখার মত। আবার অন্য অবস্থায় অন্য রূপ ফুটে ওঠে মুখে । ইচ্ছামত যেমন পৃথিবীতে পোশাক বদলায়, এখানে তেমনি মূর্তি বদলানো যায়— পুষ্প সকৌতুকে ভাবলে—অর্থাৎ কিনা আটপৌরে গেরস্থালি মূতি, পোশাকা মূতি, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করার মূতি, প্রিয়ের সঙ্গে মিলনের মূতি, ভক্তের কাছে পূজে নেওয়ার মূতি—এৱা আছে বেশ মজায় ! প্রণয়দেবী পৃথিবীর এই গ্ৰগলভ বালিকার চিন্তা বুঝতে পেরে স্নেহের হাসি হাসলেন । বল্পেন—আমি পৃথিবীতে এখন যেতে পারচি নে । তুমি যাও, যতীনকে সঙ্গে নিয়ে যাও । এখানে সরে এসো, যে ব্যাপারের জন্যে পাঠাচ্ছি এখানে এসে দেখ দাড়িয়ে । ওদিকের যে প্রকাও বড় ফরাসী বে-উইণ্ডোর মত জানালার ধারে তিনি পুষ্প আসবার আগে দাড়িয়ে কি দেখছিলেন, পুষ্প গিয়ে সেখানে দাড়ালো ।